Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Labour class

অম্বানী-আদানিদের পণ্যে ‘না’ শ্রমজীবীর

ওই হাসপাতাল বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির অন্তর্গত। নয়া কৃষি আইনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নিয়ে রবিবার বালিতে শ্রমজীবী পাঠশালায় এক আলোচনাসভা হয়।

আলোচনা চলছে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র

আলোচনা চলছে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল 
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:১৯
Share: Save:

কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল দেশ। চাষির উপকার হবে নাকি অপকার, প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার উন্নতি হবে নাকি তা ধ্বংসের মুখে পড়বে, রাজনীতির আঙিনা ছাড়িয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই আবহে দিল্লিতে আন্দোলনরত চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে অম্বানী এবং আদানি গোষ্ঠীর পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নিল হুগলির শ্রীরামপুর এবং হাওড়ার বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শুধু চাষি নন, নয়া কৃষি আইনের ধাক্কা সব শ্রেণির সাধারণ মানুষের গায়ে এসে লাগবে। নয়া ব্যবস্থার সুফল ভোগ করবে শুধু মুষ্টিমেয় কিছু কর্পোরেট সংস্থা। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘আমরা কৃষক-শ্রমিকের পক্ষে। কারণ, শ্রমজীবী হাসপাতাল দলমত নির্বিশেষে শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন। অতীতে আমরা সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে কৃষকের পাশে থেকেছি। চুক্তিচাষের বিরোধিতা করেছি।’’

ওই হাসপাতাল বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির অন্তর্গত। নয়া কৃষি আইনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নিয়ে রবিবার বালিতে শ্রমজীবী পাঠশালায় এক আলোচনাসভা হয়। মূল বক্তা ছিলেন অংশুমান দাস। সমিতি সূত্রের খবর, ঘণ্টা তিনেকের আলোচনায় মূলত তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, নয়া কৃষি আইনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে লিফলেট বিলি ও সামাজিক মাধ্যমেও প্রচার চালানো হবে। দ্বিতীয়ত, ছোট ছোট দল গড়ে চাষি এবং ভোক্তাদের কাছে গিয়ে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

তৃতীয়ত, আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি মেনে আদানি, অম্বানীদের পণ্য বয়কট করা হবে। সমিতির সদস্যেরা বন্ধু বা পরিচিত লোকজনকেও ওই অনুরোধ করবেন। একই কারণে অম্বানী গোষ্ঠীর বহুল ব্যবহৃত একটি ফোন বা সিমকার্ড ব্যবহার করা হবে না। ওই সংস্থার ফোন থেকে যেন তাঁদের ফোন করা না-হয়, বন্ধুদের সে কথা তাঁরা জানিয়ে দেবেন।

হাসপাতালের কার্যকরী কমিটির সদস্য কৃশানু মিত্র বলেন, ‘‘নয়া আইনে কৃষকের সর্বনাশ। কেননা, সরকার নির্ধারিত ক্রয়মূল্য থাকবে না। বহুজাতিক সংস্থা যা ব‌লবে তাই হবে। গণবন্টন ব্যবস্থাও ধ্বংস হবে। শ্রমজীবী মানুষকে ভুখা পেটে থাকতে হবে।’’

মনোবিদ মোহিত রণদীপ রবিবারের সভায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মজুতদারি হলে গরিব মানুষ সংসার চালাতে কতটা সমস্যায় পড়েন, সবাই জানে। আইনে তা সিদ্ধ হলে দামের কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকবে না। খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। একটি বা দু’টি কর্পোরেট সংস্থা শুধু মুনাফা লুটবে। সরকারি বন্দোবস্তে মানুষের এই সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অবিলম্বে নয়া আইন পরিবর্তন করা দরকার। তার বদলে প্রচলিত কৃষি এবং বাজার ব্যবস্থার ফাঁকফোকর বুজিয়ে পরিকাঠামো ঢেলে সাজা উচিত। স্বচ্ছ ভাবে যাতে সব চলে, সে দিকে নজর দেওয়া হোক।’’

গৌতম বলেন, ‘‘ধরুন, ব্যাপক হারে কোনও কিছুর দাম যদি বাড়ে, হাসপাতালের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সেই দরেই কিনতে হবে। পরিষেবার বিনিময়ে সেই টাকা চিকিৎসাধীন সাধারণ মানুষের থেকেই নিতে হবে। অর্থাৎ, পরিস্থিতির শিকার সাধারণ মানুষই হবেন। আমাদের, বন্ধুবান্ধব, হাসপাতালের কর্মী, পরিচিত লোকেরা— সকলের সংসারের ক্ষেত্রেও মুশকিল হবে। সেই কারণেই আমরা এই আইনের বিরোধিতা করছি।’’

এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে?

হাসপাতালের এক সদস্য এই বক্তব্য নস্যাৎ করে বলেন, ‘‘গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের অসুবিধার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। গরিব, শ্রমজীবী মানুষ তো সব দলেই আছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Labour class boycott Ambani Adani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy