বন্ধ সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা। নিজস্ব চিত্র
আদালতের নির্দেশে অবশেষে অর্থপ্রাপ্তি হচ্ছে। কিন্তু কবে? কী ভাবে? শারদ-উৎসব শুরুর আগে খুশির বাতাবরণেও একরাশ প্রশ্ন ঘুরছে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপের শ্রমিক মহল্লায়। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ওই কারখানার শ্রমিকেরা বুধবারই সংবাদমাধ্যমে জেনেছেন, তাঁরা বকেয়া পেতে চলেছেন। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় হিসেব-নিকেশ। কিন্তু কবে এবং কী ভাবে সেই টাকা তাঁরা হাতে পাবেন, এ দিন বিকেল পর্যন্ত জেনে উঠতে পারেননি তাঁরা। শুরু হয়েছে প্রহর গোনা।
কারখানার ‘ওটিআর’ বিভাগের শ্রমিক শঙ্কর বিশ্বাস এখন যোগব্যায়াম শিখিয়ে পেট চালান। অর্থপ্রাপ্তির কথা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘৩৮ বছর ডানলপে কাজ করেছি। ভদ্রস্থ বেতন পেতাম। কিন্তু কারখানা বন্ধের পর চোখে অন্ধকার দেখলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি ভাল যোগব্যায়াম করতাম। সেই শিক্ষাকে আজও আঁকড়ে ধরে কোনও ভাবে পেট চালাচ্ছি। টাকাটা পেলে এই লড়াইয়ের বৃত্তটা সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু কবে পাব, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ অসীম চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘‘উৎসবের মরসুমে টাকাটা পেলে এর চেয়ে ভাল কিছুই হয় না।’’
কারখানার কর্মী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চকে কলকাতা হাইকোর্টের ডেপুটি অফিসিয়াল লিকুইডেটর একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, বকেয়া মেটাতে ১৯ কোটি ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মিলেছে। যৌথ মঞ্চের তরফে কারখানারই এক কর্মী, জগবন্ধু সাহাকে আদালত নিযুক্ত স্পেশাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকেই চিঠি লিখে বকেয়া মেটানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে। বেতন-সহ যাবতীয় খাতে প্রাপ্য আদায়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল যৌথ মঞ্চ। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় কারখানার সম্পত্তি বেচে শ্রমিকদের বকেয়া মেটাতে। সেই নির্দেশের বলেই এ বার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকা পেতে চলেছেন শ্রমিকেরা।
কিন্তু শ্রমিকেরা সেই টাকা কবে হাতে পাবেন?
দিনক্ষণ নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি জগবন্ধু। তবে, তাঁর আশা, উৎসবের মরসুমেই শ্রমিকেরা টাকা পেয়ে যাবেন। কারণ, প্রত্যেক শ্রমিকের পাওনার হিসেব চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। জগবন্ধু জানান, ১৪২০ জনের হিসাব চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ছাড়া এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে প্রত্যেক শ্রমিকই পাবেন। এই তালিকা বাদে আরও বেশ কিছু শ্রমিক রয়েছেন, যাঁদের শুধুমাত্র পিএফের টাকা বকেয়া। আর কিছু দিনের মধ্যে সেই সব হিসাব চূড়ান্ত হলেই টাকা দেওয়া হবে শ্রমিকদের।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের শিল্প-মানচিত্রে মানচিত্রে সাহাগঞ্জের ডানলপ টায়ার কারখানা এক সময় ব্যতিক্রমী ছিল। শুধু গাড়ির টায়ার তৈরি নয়, দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের কাজও হত ওই কারখানায়। বাম আমলে ছাবারিয়া গোষ্ঠীর হাত থেকে পবন রুইয়া গোষ্ঠীর হাতে যায় ওই কারখানা। কিন্তু মালিকানা বদল হলেও কারখানার অতীতের সুনাম ফিরে আসেনি। বারে বারে কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। সাত বছরের বেশি সময় ধরে টানা বন্ধ।
নিরুপায় শ্রমিকেরা কেউ এখন ছাত্র পড়াচ্ছেন, কেউ নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন, কেউ বা অন্য কোনও পেশা বেছে নিয়েছেন। লোকের বাড়ির বাগানে কাজ করেছেন, এমন শ্রমিকও রয়েছেন। জগবন্ধু নিজেই এখন টিউশন করেন। এক শ্রমিক বলেন, ‘‘অনেক বিশ্বকর্মা পুজো এবং শারদ উৎসব অন্ধকারেই কেটে গিয়েছে! আনন্দ করার মতো মন ছিল না। এ বার আলো জ্বলল। আজ হোক বা কাল, টাকাটা তো পাব। পরিমাণও তো কম নয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy