ছবিটা যেন রাতারাতি বদলে গিয়েছে। রীতিমতো ওয়াকওভার পাওয়ার কথা ছিল যে কেন্দ্রে সেখানে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধের শক্ত প্রাচীর। আর আচমকা এই প্রতিরোধই প্রচারের আলোয় তুলে এনেছে উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রকে।
হাওড়ার এই কেন্দ্রে প্রথমে সিপিএম প্রার্থী করে শুক্লা ঘোষকে। তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও শুরু করে দিয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। পরে কেন্দ্রটি ছেড়ে দেওয়া হয় কংগ্রেসকে। দলের তরফে প্রার্থী করা হয় অলোক কোলেকে। তবে চমক তখনও বাকি ছিল। এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের প্রার্থী নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না তৃণমূলের। কিন্তু শেষ রাতে বাজিমাত করার মতোই সদ্য দল ছাড়া তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য (প্রাক্তন উপাধ্যক্ষও) সরোজ কাঁড়ারকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রতিপক্ষকে একেবারে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে জোট। যার জেরে ভোটের হিসাব-নিকাশও গুলিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের। এক সময়ের (১৯৭২-’৭৭) কংগ্রেস বিধায়ক অবশ্য পুরনো আশ্রয়ে ফিরে বেশ খোশ মেজাজেই। জানালেন, ওদের (পড়ুন তৃণমূলের) লড়াইটা আর সহজ হবে না।
তৃণমূলের হেভিওয়েটকে প্রার্থী হিসাবে পেয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস সমর্থকেরা যারপরনাই উৎসাহিত। ইতিমধ্যেই জয়ের ডঙ্কা বাজিয়ে শুর্ হয়েছে ‘দেখবেন আমরাই জিতব’-র প্রচার। এই কেন্দ্রে সরোজবাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা।
জেলা পরিষদ সদস্য তথা স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা দল ছাড়ায় তৃণমূল বেশ বিপাকে বলে জোট দাবি করলেও, তৃণমূলকে এখানে চ্যালেঞ্জ জানানো যে বেশ কঠিন তা ২০১১ সালের বিধানসভা এবং ২০১৪ র লোকসভা ভোটের ফলেই বোঝা যায়। ২০১১-য় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী সমীরবাবু পেয়েছিলেন ৯১,৮৭৯টি ভোট। বিপরীতে সিপিএম পেয়েছিল ৬৭, ৯৮৮টি ভোট। ২০১৪-র লোকসভায় তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৯৮,২৭৭টি। ৫১,৫২০টি ভোট পেয়েছিল সিপিএম। কংগ্রেস পেয়েছিল ৭ হাজার ২৩৮টি ভোট। এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের ভোট একসঙ্গে হলেও তা নিয়ে চিন্তা নেই তৃণমূলের।
তবে একেবারেই যে চিন্তা নেই তা মানতে নারাজ দলেরই একাংশ। বিশেষত, সারদা এবং সম্প্রতি নারদ কেলেঙ্কারি ছাড়াও উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনা-সহ নানা দুর্নীতির প্রভাব যে সহজে এড়ানো যাবে না তা বলছেন তাঁরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় ইস্যু। বন্যা উদয়নারায়ণপুরের নিয়মিত ঘটনা। গত বছরেও এখানে বন্যায় সময়ে ত্রাণ বিলি নিয়ে দলবাজির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। খচ খচ করছে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি নিয়ে দলবাজির কাঁটা। যা নিয়ে গত মার্চ মাসে পেঁড়ো গ্রামে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে খুন হন আর এক সিভিক ভলান্টিয়ার। দু’জনেই তৃণমূলের সমর্থক। পুলিশও জানিয়েছে, ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদেই ওই খুন। স্থানীয় তাঁতহাট নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় সাত কোটি টাকা খরচে তাঁত হাট তৈরির টাকা দিচ্ছে রাজ্য হস্তশিল্প দফতর। কথা ছিল, সেখানে স্টল পাবেন স্থানীয় তাঁতশিল্পীরা। কিন্তু অভিযোগ, স্টল বিলির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। সামান্য কিছু স্টল তাঁতিরা পেলেও বাকি স্টলগুলি দেওয়া হয়েছে অন্য ব্যবসায় যুক্তদের। যা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।
বিরোধী সিপিএম-কংগ্রেস জোট এ সব বিষয়কে ইসু করার পাশাপাশি পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট লুঠকে প্রচারে এনেছে। উদাহরণ দিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে অন্তত ২৯টি বুথের একেকটিতে বিরোধীরা যেখানে ২-৩টি করে ভোট পেয়েছে তৃণমূল সেখানে পেয়েছে পাঁচশোর বেশি ভোট। জোটপ্রার্থী সরোজবাবু বলেন, ‘‘এই বুথগুলিতে ভোট লুঠ আটকাতে আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছি।’’
বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ তুড়ি মেরে তৃণমূল প্রার্থী সমীরবাবুর দাবি, ‘‘সারদা ও নারদ বিরোধীদের অপপ্রচার। গত সাড়ে চার বছরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। উন্নত হয়েছে রাস্তাঘাট। তাঁত হাট নিয়ে কোনও বেনিয়ম হয়নি।’’ ২৯টি বুথে বিরোধীদের কম ভোট পাওয়া নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সিপিএমের কোনও ভোটার নেই, কর্মী নেই। তাই কিছু কিছু জায়গায় তারা কম ভোট পেয়েছে। তার জন্য তো আমরা দায়ী নই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সিপিএম-কংগ্রেসের অনৈতিক জোটকে প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরছিই না। গতবারের জয়ের ব্যবধানকে আরও বাড়ানোই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ।’’ বিরোধীরা অবশ্য সমীরবাবুর চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যে কখনও কখনও ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় তারও নজির রয়েছে, এমন সুরও শোনা যাচ্ছে দলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy