Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bagnan

অবসরের পরেও রোজ ক্লাসে শিক্ষক

ইতিহাসের ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘যতদিন পারব শিক্ষাদান করে যাব। ”

ভরসা: কমলকুমার মুখোপাধ্যায়।

ভরসা: কমলকুমার মুখোপাধ্যায়।

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৪
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই থাকতে ভালবাসেন তিনি। ২০১৮ সালের অগস্টে বাগনানের দেউলগ্রাম মানকুর বাকসি (ডিএমবি) হাইস্কুল থেকে তাঁর অবসর তাই রয়ে গিয়েছে শুধুই খাতায়-কলমে। অবসরের পরের দিন থেকেই আবার স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন কমলকুমার মুখোপাধ্যায়। বিনা পারিশ্রমিকে।

ইতিহাসের ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘যতদিন পারব শিক্ষাদান করে যাব। ১৯৮৩ সালে স্কুলে যোগ দিয়েছিলাম। স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার একটা ভালবাসা জন্মে গিয়েছে।’’ সেই ভালবাসার খাতিরে তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে এক লক্ষ টাকা
স্কুলের উন্নয়নে দান করেছেন। সেই টাকায় ইতিমধ্যে স্কুলে পাঁচিলও তৈরি হয়ে গিয়েছে।

কমলবাবু ছাড়া ওই স্কুলে ইতিহাসের আর একজন মাত্র শিক্ষিকা আছেন। তাঁদের দিয়েই পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাসের পঠনপাঠন সামলাতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। তাই দু’বছর আগে কমলবাবুর অবসরের সময় এগিয়ে আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েন তাঁরা। কমলবাবুরই বিপত্তারণ হয়ে এগিয়ে আসেন। স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান, অবসরের পরেও তিনি পড়াতে ইচ্ছুক। হাতে চাঁদ পেয়ে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান।

নিয়মমাফিক অবসরের পরের দিনও বেলা সওয়া ১১টায় স্কুলে চলে আসেন কমলবাবু। স্কুলের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে তাঁর নামের পাশে ক্লাস বরাদ্দ থাকে। সেই রুটিন মেনে তিনি ক্লাস নেন।
অবসর নিয়েছেন বলে তাঁর পড়ানোতে কোনও শৈথিল্য থাকে না বলে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে। তাঁর এই পরিষেবা স্কুলও মেনে নিয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে।

সম্প্রতি স্কুলের শতবর্ষের অনুষ্ঠান হল। তাতে প্রাক্তন শিক্ষকদের স্কুলের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কিন্তু কমলবাবু সংবর্ধনা নিতে অস্বীকার করেন। তিনি তো আর ‘প্রাক্তন’ নন! প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক বলেন, ‘‘কমলবাবু নিজেকে প্রাক্তন শিক্ষক হিসাবে মানতে চাননি। তাই তিনি সংবর্ধনা নেননি। আমরাও তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিই। দু’বছর আগে তিনি ফেয়ারওয়েলও নেননি। তাতে বিদায়ের বার্তা ছড়িয়ে পড়বে বলে আপত্তি জানিয়েছিলেন।’’

কমলবাবুর আপত্তি আরও রয়েছে। শিক্ষক হিসেবে ওই স্কুলে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করায় কর্তৃপক্ষ কমলবাবুকে সাম্মানিক অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। তা-ও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘অনেক জোরাজুরির পরে কমলবাবু ক্যান্টিনের চায়ের দাম নিতে রাজি হয়েছেন। সেটা আমরা প্রতি মাসে মিটিয়ে দিই।’’ ইতিহাসের অন্য শিক্ষিকা পম্পা সরকার বলেন, ‘‘কমলবাবু নিয়মিত স্কুলে আসায় মনে বল পাই। মাথার উপরে ছাতার মতো থাকেন।’’

ওই স্কুল এবং ছাত্রছাত্রী ছাড়া কমলবাবুর ভালবাসার আর একটি জায়গা রয়েছে। তাঁর ফুলের বাগান। আমতার মেলাইবাড়ির বাসিন্দা কমলবাবু বাড়িতে একটি বাগান করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অবসর সময়ে বাগানের পরিচর্যা করি। ফুলগুলিও আমার কাছে ছাত্রদের মতোই সুন্দর।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bagnan Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy