Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Hooghly Municipality

পুর-পদে বহু নেতার আত্মীয়!

লকডাউনে দেশ জুড়ে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এ রাজ্যেও কাজ হারানো মানুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০২:১০
Share: Save:

নিয়োগ পরীক্ষায় অব্যবস্থা নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল গত বছরই। লকডাউন পর্বে দেখা যাচ্ছে, হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন অন্তত ৫৪ জন। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি তৃণমূল নেতাকর্মী বা তাঁদের আত্মীয়, এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। ‘গ্রুপ-ডি’ পদে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ওই পুরসভার এক বিদায়ী কাউন্সিলরও। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ পৌঁছে গিয়েছে নবান্ন এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেও।

লকডাউনে দেশ জুড়ে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এ রাজ্যেও কাজ হারানো মানুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এই আবহে এ ভাবে চাকরিতে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যে তদন্তের আর্জি জানিয়ে হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে, ঘটনায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ক্ষুব্ধ। এখনও পুরভোট হয়নি। সামনের বছর বিধানসভা ভোট। এই নিয়োগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করছেন ওই তৃণমূল নেতারা। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। দলের ভাবমূর্তির প্রশ্নে আমরা কখনই আপস করি না। পুরমন্ত্রীকে আমি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য অনুরোধ করেছি।’’ দলেরই এক বর্ষীয়ান বিদায়ী কাউন্সিলর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছেন।

নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন চুঁচুড়া বিদায়ী পুরপ্রধান তথা বর্তমান প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অনুমোদিত পদেই একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে গত বছর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেইমতো চাকরি দেওয়া হয়েছে। এতে অন্যায় কী আছে?’’

পুরসভা সূত্রের খবর, ওই পদগুলিতে নিয়োগের জন্য সাধারণত শ্রম দফতর বা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেইমতো গত বছরের মাঝামাঝি জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। ২০ হাজারের বেশি প্রার্থী পরীক্ষা দিতে এসে নানা অব্যবস্থা নিয়ে হইচই করেছিলেন। গত মার্চ মাসের গোড়ার দিকে পুরবোর্ড বাছাই প্রার্থীদের নিয়োগে অনুমোদন দেয়। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীই কাজে যোগ দিয়েছেন। তারপরেই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে।

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, দলের নেতাকর্মীদের স্থানীয় আত্মীয়রাই শুধু নন, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের মতো দূরের জেলায় থাকা আত্মীয়েরাও চাকরি পেয়েছেন। এমনকী, কলকাতার দু’এক জন নেতার আত্মীয়েরাও আছেন।

দলেরই এক বর্ষীয়ান বিদায়ী কাউন্সিলরের ক্ষোভ, ‘‘এই সময়ে অস্থায়ী সাফাইকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকেও তো অন্তত স্থায়ী পদে উন্নীত করা যেত। ওঁরা তো করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। কিন্তু তা হল না।’’

বিরোধীরা অবশ্য ঘটনায় অবাক হননি। প্রাক্তন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী, সিপিএম নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শাসকদল সম্ভবত বুঝতে পেরেছে রাজ্যে ওরা আর ক্ষমতায় ফিরবে না। তাই নিয়োগের নামে ওঁরা যা খুশি করেছেন। তবে সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে চিনেছেন ওঁদের। সেই কাটমানি দিয়ে শুরু হয়েছিল।’’ বিজেপি-র হুগলি (সদর) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে চাপা পড়েছে। আমরা ছাড়ব না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যতদূর যেতে হয় যাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Municipality Chinsurah Hooghly TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy