Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
যাত্রীদের সচেতন হতে বলছে রেল
Indian Railways

কামরায় ভিড় সামলাবে কে!

ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে যাত্রীরা যাতে দূরত্ব বিধি মেনে চলেন, তার জন্য পরিকল্পনা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু তা কতটা কাজে আসবে, প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাই সেই প্রশ্ন উঠে গেল।

দূরত্ববিধি শিকেয়। প্রথমদিনের ট্রেন সফরে উলুবেড়িয়ায় দেখা গেল এমনই িচত্র। ছবি: সুব্রত জানা

দূরত্ববিধি শিকেয়। প্রথমদিনের ট্রেন সফরে উলুবেড়িয়ায় দেখা গেল এমনই িচত্র। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৪৩
Share: Save:

বজ্রআঁটুনি ছিল কিছু জায়গায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার ফস্কা গেরোও।।

করোনা পর্বে সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পরে বুধবার লোকাল ট্রেন চালুর প্রথম দিনে চুম্বকে এই ছবিই চোখে পড়ল দুই জেলায়।

ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে যাত্রীরা যাতে দূরত্ব বিধি মেনে চলেন, তার জন্য পরিকল্পনা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু তা কতটা কাজে আসবে, প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাই সেই প্রশ্ন উঠে গেল।

ঘোষণা অনুযায়ী এ দিন কাকভোর থেকেই ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যায়। টিকিট কাউন্টারের সামনে, প্ল্যাটফর্ম জুড়ে গোল দাগ কাটা হয়েছে দূরত্ববিধি রক্ষার জন্য। সকালের দিকে ট্রেন মোটের উপরে ফাঁকা ছিল। তবে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা বদলাতে থাকে। হুগলির শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর প্রভৃতি স্টেশনে টিকিট কাটার ভিড় জমতে শুরু করতেই শারীরিক দূরত্ব উধাও হয়। পুলিশের ভূমিকা ছিল স্রেফ দর্শকের।

প্রতিটি স্টেশনে থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা ছিল। যাত্রীরা মাস্ক পরতে ভোলেননি। তবে ভিড় নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থার আশ্বাস শোনা গিয়েছিল, কার্যক্ষেত্রে তা দেখে গেল না। সুরক্ষা বিধি মানার জন্য একটি মাত্র জায়গা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকা-বেরনোর কথা বলা হলেও সর্বত্র তা হয়নি। শ্রীরামপুরে আগের মতোই প্ল্যাটফর্মের যে কোনও প্রান্ত দিয়ে ওঠানামা চলেছে। বেলা গড়াতে হাওড়াগামী ট্রেনে ভিড় বাড়ে। সন্ধ্যায় আপ ট্রেনে।

কোন্নগরের বাসিন্দা বিনয় হালদার ডালহৌসিতে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ায় যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ট্রেনে উঠি। ভালই ভিড় ছিল। বসার জায়গা ভর্তি ছিল। অনেকে দাঁড়িয়েও ছিলেন। সন্ধ্যায় ফেরার সময়েও তাই। ভিড় সামলাবে কে!’’

পূর্ব রেলের মুখ্য সংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি ট্রেনে বসার ক্ষেত্রে দূরত্ববিধি মানার বিষয়ে আমরা প্রচার করছি। মাইকে সে কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে।’’ টিকিট কাউন্টারে দূরত্ববিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন আরপিএফের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। তবে কামরায় ভিড় সামলানো নিয়ে সদুত্তর মেলেনি।

নাগরিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম’-এর সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের জন্য ট্রেন চালানো জরুরি ছিল। তবে, করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে যত বেশি সম্ভব ট্রেন চালানো দরকার।’’ একই বক্তব্য এসইউসি প্রভাবিত ‘সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি’র সভানেত্রী লিলি পালের।

ফাঁকায় যাঁরা যেতে পেরেছেন, তাঁরা অবশ্য খুশি। চুঁচুড়ার বাসিন্দা আভা মাল ব্যবসার জন্য প্রসাধনী দ্রব্য কিনতে কলকাতায় যান। তাঁর কথায়, ‘‘সড়কপথে গেলে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। ট্রেন চালু হওয়ায় বাঁচলাম।’’ পুরনো অভ্যাসে ফিরতে পেরে চন্দননগরের বাসিন্দা তমালি বন্দ্যোপাধ্যায়ও খুশি। তিনি কলকাতায় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে বিভিন্ন স্টেশনে ছিল থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে টিকিট কাউন্টারে পুলিশ ছিল। যাত্রিসংখ্যা ছিল কম। বাগনান স্টেশনে দাঁড়িয়ে রাজু মুন্সি নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘খুব সকালের ট্রেনে যাঁরা যান তাঁদের সিংহভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁদের কাজের ক্ষেত্র এখনও সে ভাবে উন্মুক্ত হয়নি। তাই ভিড় নেই।’’

সকাল ৮টার পর থেকে অবশ্য অফিসযাত্রীদের ভিড় বাড়ে। কামরায় যে আসন-বিন্যাস করা হয়েছিল, তা-ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেনেছেন যাত্রীরা। কোন আসনে বসা যাবে না, তা চিহ্নিত করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘যাত্রীরা সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন।’’

ব্যান্ডেল-নৈহাটি শাখার যাত্রীদের অভিযোগ, সকালে খুব কম ট্রেন চলেছে। হালিশহরের বাসিন্দা সুন্দরগোপাল দাস লিলুয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। ‘ডিউটি’ সেরে বাড়ি ফেরার জন্য আপ হাওড়া-ব্যান্ডেল লোকালে সকাল ১০টা নাগাদ ব্যান্ডেলে পৌঁছন। বিকেলের আগে ট্রেন নেই শুনে জলপথে রওনা হন।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy