সরাইঘাটায় বোর্ড পোঁতা আছে ২০১৮ সাল থেকে। কাজ হয়নি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
বছর দেড়েক বিধায়ক মহম্মদ নুরউজ্জামানকে দেখতেই পাননি পুরশুড়ার মানুষ।
বিধায়ক কবে এলাকায় আসবেন, কেউ জানেন না। তিনি নাকি ফোন ধরেন না, এসএমএস-হোয়াটস্অ্যাপেরও জবাব দেন না!
বৃত্তির আবেদনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের বিধায়কের সই লাগে। সেই সই পেতে পুরশুড়ার ছাত্রছাত্রীদের স্থানীয় নেতাদের শরাণাপন্ন হতে হয়। তাঁরা সুবিধামতো বিধায়কের কলকাতার পার্কসার্কাসের বাড়ি গিয়ে সই করিয়ে আনেন। অনেক ছাত্রছাত্রীকে আরামবাগের বিধায়কের কাছেও যেতে হয়। বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আরও। তাই পাঁচ বছর আগে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি কতটা বাস্তবায়িত হল তা নিয়ে আর মাথা ঘামান না ভোটদাতারা। স্থানীয় নেতাদেরই ক্ষোভ সামলাতে হয়।
দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, পুরশুড়া বিধানসভায় বিজেপির থেকে ২৫ হাজার ৮৪২ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে শাসক দল। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান মুছে তৃণমূল কতটা এগোতে পারবে, তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বিধায়কের বিরুদ্ধে ভোটদাতাদের ক্ষোভ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ভোটদাতাদের অনাস্থাও।
দলের ব্লক সভাপতি কিঙ্কর মাইতি বলেন, “উন্নয়নের চেয়ে স্থানীয় নেতাদের আচার-আচরণ নিয়ে বেশ কিছু মানুষ ক্ষুব্ধ। বিধায়ককে হাতের কাছে না-পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে।’’ কিঙ্কর কিছুটা রাখঢাক করলেও দলের পুরনো নেতা তথা বর্তমানে জেলা সহ-সভাপতি অষ্ট বেরার স্বীকারোক্তি, ‘‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা কর্মসূচিতে গিয়ে খালি তাড়া খাচ্ছি বিভিন্ন গ্রামে। কত মিথ্যা কথা আর বলব! এলাকার যে সব নেতা এতদিন সেখানে যেতেন, তাঁদের খুঁজছেন মানুষ। তাঁরা মুখের উপর বলে দিচ্ছেন, লুটেপুটে খাওয়া ছাড়া কিছু হয়নি। এ বার এখানে বড় মাপের কোনও প্রার্থী না দিলে লোকসভা ভোটে পিছিয়ে থাকাটার ফারাকটা আরও বাড়বে।”
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারে বেরিয়ে নুরউজ্জামান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিস্তর। তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি বলে ভোটদাতাদের অভিযোগ। অবশ্য তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে ঠিক কী কী ছিল, তা-ও অনেকে মনে করতে পারেন না। কারণ, সার্বিক ভাবেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমেছে। তা সে আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়েই হোক বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে।
হরিণখোলা-২ পঞ্চায়েত এলাকার তন্তুজীবীদের গ্রাম সরাইঘাটা। সেখানকার ভক্তিভূষণ দে’র অভিযোগ, “খালি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কংক্রিটের রাস্তাগুলো করে উন্নয়নের গল্প ফাঁদছে শাসকদল। সেই রাস্তাও আমাদের গ্রামে হয়নি। ২০১৮ সাল থেকে গ্রামীণ শ্মশান চুল্লির বোর্ড পোঁতা হয়েছে। কাজ হয়নি। দু’ট্রাক্টর বালি পড়েছিল। তা-ও নেতারা তুলে নিয়ে গিয়েছেন।’’ নিজেকে তৃণমূল সমর্থক দাবি করে সোদপুর গ্রামের বৃদ্ধ শেখ ইসমাইলের ক্ষোভ, “গ্রামের মানুষ তো আর এমনি এমনি বিমুখ হচ্ছেন না। এখন এমনই অবস্থা, কোনও ভাবেই প্রায়শ্চিত্ত করার রাস্তা নেই। ‘দিদিকে বলো’ ফেল। ‘বঙ্গধ্বনি’-কে এখানে লোকে ‘ব্যাঙ্গধ্বনি’ বলছেন। আর ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি স্পষ্ট করে দিল, ১০ বছরে কোনও কাজ হয়নি।’’ আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরাও মানছেন, ‘‘বিধায়ককে না পেয়ে পুরশুড়ার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আমার কাছে আসে। বিধায়ক এলাকায় না থাকলে বেশ কিছু জনপরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
পুরশুড়ায় বিধায়ক এবং শাসকদলের প্রতি এই ক্ষোভকেই হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া পুরশুড়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “তৃণমূলের মূল সমস্যা— অন্যায়ের কোনও প্রতিকার নেই। অতীতের মতো মানুষের জন্য কাজ করার বদলে দলটাকে অনেকেই ব্যবসাক্ষেত্র বানিয়েছেন। সেই দলকে কেন মানুষ রাখবেন? ১০ বছর ধরে প্রশাসনটা যে অযোগ্য, তারই প্রমাণ ভোটের মুখে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি।”
যাবতীয় অভাব-অভিযোগ, বিরোধীদের কটাক্ষ, দলীয় নেতাদের ক্ষোভ নিয়ে বিধায়ক নুরউজ্জামানের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি শনিবার ফোন ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy