Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

আরামবাগে দাহ করার জায়গা নিয়ে ধুন্ধুমার

সময় যত গড়াচ্ছে, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকার নিয়ে সমস্যা ততই জটিল হচ্ছে গ্রামীণ হুগলিতে। 

পথ অবরোধ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পথ অবরোধ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৯:০৬
Share: Save:

বিক্ষোভ, অবরোধ, ভাঙচুর, মারধর এবং পরিশেষে পুলিশের ‘লাঠিচালনা’।

সময় যত গড়াচ্ছে, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকার নিয়ে সমস্যা ততই জটিল হচ্ছে গ্রামীণ হুগলিতে।

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ দাহ করার জন্য সোমবার একটি জায়গা চিহ্নিত করে আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন। সেখানে দেহ সৎকারে আপত্তি জানিয়ে মঙ্গলবার সকালে পথে নামেন আরামবাগ শহরের কয়েকশো বাসিন্দা। অভিযোগ, অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে মারধর করেন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙা হয় একটি গাড়ি। পুলিশের বিরুদ্ধেও পাল্টা লাঠি চালনার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থল আরামবাগ শহরের পল্লিশ্রী। পুলিশ গ্রেফতার করেছে ১৪ জনকে।

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কোথায় হবে, তা নিয়ে সোমবার বিকালে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মহকুমাশাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহ। প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক হয়, আরামবাগ শহরের পল্লিশ্রী সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের ধারে সেচ দফতরের পরিত্যক্ত একটি জায়গায় দাহ করা হবে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হন পুরসভার ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ।

এ দিন সকালে পল্লিশ্রীর ওই জায়গায় অস্থায়ী শ্মশান তৈরির কাজ শুরু হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীর একাংশ। আরামবাগ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর যাওয়ার রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। দাবি তোলেন, ওই জায়গায় করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ পোড়ানো যাবে না। বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন পুলিশকর্মীরা। এর পরেই পরিস্থিতি ঘোরাল হয়ে ওঠে।

অভিযোগ, বিক্ষোভ তুলতে যাওয়া কয়েকজন পুলিশকর্মীকে বিক্ষোভকারীরা মারধর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশের লাঠিতে জখম হন কয়েকজন। যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রায় আধঘণ্টা পরে অবরোধ মুক্ত হয় গুরুত্বপূর্ণ ওই রাজ্য সড়ক। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে পুলিশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলে। তাদের মধ্যে এক জন অ্যাম্বুলেন্সের পিছনের কাচ ভেঙে পালিয়ে যায় বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ জানিয়েছে, রাস্তা অবরোধ করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুর ও পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার জন্য তল্লাশি অভিযান চলছে। ধৃতদের মধ্যে ১৩ জনই মহিলা।

মহকুমা শাসক বলেন, ‘‘সেচ দফতরের ওই ফাঁকা এবং পরিত্যক্ত জায়গা কেউ কোনওদিন ব্যবহার করেননি। পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে সেখানেই অস্থায়ী কোভিড-শ্মশান বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওখানে কেউ কাজে বাধা দিলে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করতে ধারাবাহিক প্রচার চলছে।”

মহকুমা প্রশাসন এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ সৎকার নিয়ে আরামবাগের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি চলছিল। সচেতনতা প্রচার চালিয়েও মানুষকে অনেক জায়গায় বোঝানো যায়নি। পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং তাঁদের হেনস্থা করারও অভিযোগ উঠেছে কয়েকবার।

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকার নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে সমস্যা হওয়ায় আরামবাগ কোভিড হাসপাতাল থেকে দেহ নিচ্ছেন না মৃতের পরিজনেরা। বিভিন্ন নদীর চরে দেহ পোড়ানো নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ, পথ অবরোধ লেগেই রয়েছে। গত ১ মে রাতে করোনা-আক্রান্ত এক বৃদ্ধার মৃতদেহ খানাকুলের বৈদ্যুতিক শ্মশান চুল্লিতে পোড়ানো হয়। পরের দিন সকালে অগ্নিগর্ভ হয় এলাকা।

চুল্লি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিটির সম্পাদক-সহ কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীর একাংশের বিরুদ্ধে। গত মাসে একই ঘটনা ঘটে পুরশুড়ার দিগরুইগাট এলাকায়। সেখানে মুণ্ডেশ্বরী নদীর চরে একটি দেহ পোড়ানো হয়। পরের দিন সকালে স্থানীয় মানুষ পথ অবরোধ করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arambag COVID-19 Deaths Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy