দাপট: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজবলহাটের রাস্তায় ডিজে। —নিজস্ব িচত্র
ডিজে বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। সতর্ক করেছে পুলিশও। কিন্তু তা কানে তোলেননি ‘ডিজেপ্রেমী’রা। যথারীতি তারস্বরে ডিজে বাজিয়ে সরস্বতী পুজোর শোভাযাত্রা করছিলেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হলেও তাঁরা ছিলেন নির্বিকার। কিন্তু পুলিশের সামনে তাদের জারিজুরি খাটল না। মাঝরাস্তায় ডিজে বন্ধ করে দেওয়া হল।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজবলহাটে সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে পুলিশের এই ভূমিকায় আশ্বস্ত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘নিষেধ সত্ত্বেও কিছু যুবক ডিজে বাজাচ্ছিলেন। তাই পুলিশ বন্ধ করেছে। মানুষের অসুবিধা করে এমন কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যে কোনও উৎসবে ডিজে বাজানো কার্যত রীতি হয়ে গিয়েছে রাজবলহাটে। সরস্বতী পুজোতেও কিছু জায়গায় তারস্বরে ডিজে বাজানো হয়। তাতে প্রবীণ এবং ছোটদের নাজেহাল হতে হয়। এই সময় মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকে। পরীক্ষার্থীরা নাকাল হয়। কিন্তু ডিজে যাঁরা বাজান, তাঁদের হেলদোল থাকে না। ওই এলাকার বছর তেষট্টির এক মহিলা জানান, সরস্বতী পুজোর সময় তিনি আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান। ডিজে-র প্রচণ্ড আওয়াজে তাঁর কষ্ট হয়। বিসর্জনের দিন জানলা-দরজা বন্ধ করেও ঘরে থাকা দায় হয়।
এই পরিস্থিতিতে ডিজের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ বাড়তে থাকে। এই নিয়ে রাজবলহাট-সহ জাঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত মিটিং-মিছিল হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া থেকে গৃহবধূ,
যুবক থেকে বৃদ্ধ— সকলেই আন্দোলনে হাত মেলাচ্ছেন। সম্প্রতি এই বিষয়ে লাগাতার কর্মসূচি নেওয়া হয় নাগরিক সমাজের তরফে। পুলিশের তরফেও মাইকে প্রচার করা হয় জাঙ্গিপাড়া জুড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার ডিজের দৌরাত্ম্য তেমন ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। অভিযোগ, মোটরভ্যানে ৮-১০টি করে পেল্লাই বক্স নিয়ে শুরু হয় বিসর্জনের শোভাযাত্রা। তীব্র আওয়াজে গান বাজিয়ে চলতে থাকে উদ্দাম নাচ। রাজবলহাট বাজার, দিঘির পাড়-সহ সংলগ্ন এলাকার মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। রাত পৌনে ন’টা নাগাদ জাঙ্গিপাড়া থানার ওসি সোমনাথ দে বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ ডিজে বন্ধের নির্দেশ দিলে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। ডিজের পক্ষে থাকা যুবকেরা জানিয়ে দেন, জোরেই গান বাজানো হবে। এই নিয়ে হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের অভিযোগ, সেই সময় পুলিশকর্মীদের ঠেলাঠেলি করা হয়। ধাক্কা দেওয়া হয় ওসি-কে। এর পরেই লাঠি উঁচিয়ে পুলিশ সবাইকে সরিয়ে দেয়। ডিজে বন্ধ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ডিজে-র পক্ষে থাকা কিছু যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা অভিযোগ তুলতে থাকেন। অভিযোগ তোলা হয়, পুলিশ শোভাযাত্রা বন্ধ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক মিছিলে কেন মাইক বন্ধ করা হয় না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। এক যুবক বলেন, ‘‘ডিজে বন্ধ করতে না চাওয়ায় পুলিশ আমাদের উপরে লাঠিচার্জ করেছে।’’ লাঠিচার্জের অভিযোগ পুলিশ মানেনি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিশৃঙ্খলকারীদের সরিয়ে দিয়ে শুধু ডিজে বন্ধ করা হয়েছে। এর পরে এমন ঘটলে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ শুক্রবারও কিছু পুজোর বিসর্জন হয়। ডিজে বন্ধের জন্য রাস্তায় পুলিশ ছিল। তবে, এ দিন তেমন অভিযোগ ওঠেনি।
দিঘির পাড়ের বাসিন্দা এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড শব্দে মাইক বাজতে থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিলাম। এই ভেবে খারাপ লাগছিল যে, এ বারেও বোধ হয় নিস্তার পাব না। কিন্তু পুলিশের সৌজন্যে সেটা হল না। রাত দশটা নাগাদ পুলিশের হস্তক্ষেপে ডিজে বন্ধ হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy