— ফাইল চিত্র।
দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে গতিও। কিন্তু আচমকাই কিছুদিন ধরে হাওড়ার মুম্বই রোড বা ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের টহলদারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে!
পথ নিরাপত্তায় জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। চালু রয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচিও। কিন্তু মুম্বই রোডে সকাল থেকে মোড়ে মোড়ে শুধু দেখা যাচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের। দীর্ঘদিন যে ভাবে থানার পুলিশ গাড়ি নিয়ে টহল দিত, সে ছবি আর দেখা যাচ্ছে না। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু কেন?
গত মাসের শেষ দিকে পূর্ব মেদিনীপুরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের টাকা তোলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিজির-র পাশে বসেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, পথ নিরাপত্তার নাম করে ভুয়ো মামলা জুড়ে দিয়ে কেন টাকা তুলছে পুলিশ? ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর নামে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে কেন? কেন এত মামলা করা হচ্ছে? তারপরেই হাওড়ার মুম্বই রোড থেকে জেলা পুলিশের টহল বা নজরদারি উধাও হয়েছে বলে অনেকের দাবি।
বীরশিবপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘মাসখানেক আগে পর্যন্ত পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরুর গাড়ি থেকেও হাত বাড়িয়ে টাকা নিত। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরে দেখছি পুলিশ আর রাস্তায় নেই।’’
টহলদারি না-থাকার কথা মেনে নিয়েছেন হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের একাংশ। এতে যে দুষ্কৃতীদের পোয়া বারো হবে, সে কথাও ঠারেঠোরে স্বীকার করেছে তারা। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলেই কিছু মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা তোলার অভিযোগ করেন। বলা হয়, পুলিশের ভয়ে দ্রুত পালাতে গিয়েই গাড়িগুলি দুর্ঘটনা ঘটায়। তাই উপর মহল থেকে সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় সড়কে পুলিশ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না। দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবে।’’ জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় অবশ্য টহলদারি না-থাকার কথা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘রাস্তায় পুলিশ ঠিকই থাকে। পুলিশ ঠিকঠাকই নজরদারি চালাচ্ছে।’’
গ্রামীণ হাওড়ার মধ্যে দিয়ে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক গিয়েছে। এর মধ্যে পড়ছে বাগনান, উলুবেড়িয়া, রাজাপুর এবং পাঁচলা থানা এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে ২৪ ঘণ্টাই থানার পুলিশ ওই রাস্তায় নজরদারি চালাত। মোড়ে মোড়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গার্ডরেল রাখত। সে সব এখন উধাও! জেলা ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ‘পোস্টে’ তাদের ‘ডিউটি’ চলে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তারপরের অবস্থা নিয়েই নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা মনে করছেন, নজরদারি না-থাকায় কোনও গাড়ি নিয়ম-শৃঙ্খলা মানবে না। দুষ্কৃতীরাও অবাধে বেআইনি জিনিস নিয়ে চলে যাবে। সন্ধ্যা থেকে ট্র্যাফিক পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও দেখা মিলছে না বলে
তাঁদের অভিযোগ।
ক’দিন আগেই গাড়িতে ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগিয়ে গাঁজা পাচার করার সময় সাঁকরাইলের আলমপুরে ধরা পড়ে কয়েকজন। উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর পার্কিং থেকে ট্রাক-চালক রাম তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুলিশ রাস্তায় থাকলে গাড়ি চালাতে সাহস পাই। কিন্তু বেশ কিছু দিন রাস্তায় পুলিশ দেখতে পাচ্ছি না। এতে ভয় হচ্ছে। গাড়ি থেকে চুরি-ছিনতাই হলে কাকে জানাব?’’ ধাবা-মালিক অশোক দাস বলেন, ‘‘রাস্তায় পুলিশ থাকলে রাতে দোকানদারি করতে সাহস পাই। হঠাৎ করে রাস্তায় টহলদারি তুলে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ধাবায় যখন-তখন মদ্যপেরা এসে অশান্তি করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy