বিষ্ণু মাল হত্যা-কাণ্ডে ধৃত কৃষ্ণ মণ্ডল ও রাজকুমার প্রামাণিক— নিজস্ব চিত্র।
হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে অনেকেরই।
এতদিন তার বেপরোয়া মনোভাবের সাক্ষী থেকেছে হুগলি শহরাঞ্চল। কিন্তু তা মূলত অন্য দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার চুঁচুড়ার রায়বেড়ের নিরীহ যুবক বিষ্ণু মালকে অপহরণ করে খুন এবং তারপর দেহটি ছ’টুকরো করে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চুঁচুড়ার দাগি দুষ্কৃতী বিশাল দাসের বিরুদ্ধে। যা শুনে নিহতের প্রতিবেশী এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘খুনের ধরন শুনে তো হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে।’’ সেই বিশালের খোঁজে এখন হন্যে পুলিশ। সোমবার রাতে বিষ্ণুর কাটা দু’টি হাত এবং দু’টি পা মিলেছে বৈদ্যবাটী খালের ধার থেকে। গ্রেফতার করা হয়েছে বিশালের দুই শাগরেদ বৈদ্যবাটীর কৃষ্ণ মণ্ডল এবং রাজকুমার প্রামাণিককে। কিন্তু বিষ্ণুকে অপহরণ এবং খুনের ১৬ দিন পরেও বিশাল ধরা না-পড়ায় এলাকাবাসীর আতঙ্ক যাচ্ছে না।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশালই খুনের মাথা। খুনের ধরনে বোঝা যাচ্ছে, কতটা আক্রোশবশত ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। ওকে ধরার সব চেষ্টা চলছে।’’পুলিশ সূত্রের খবর, চুঁচুড়ার সেগুনবাগানের বাসিন্দা বিশালের বয়স বছর ত্রিশ। সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় নামে চুঁচুড়ারই এক দুষ্কৃতীর হাত ধরে তার উত্থান। দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠী বিভাজনে সে নেপু গিরি এবং রমেশ মাহাতোর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিশালের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, মাদক পাচার-সহ বিভিন্ন ধারায় গোটা দশেক মামলা রয়েছে হুগলির বিভিন্ন থানায়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রবীন্দ্রনগর বাজারে বিশালের দলবলের এলোপাথাড়ি গুলিতে দু’জন সাধারণ মানুষ জখম হন বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন তাঁদের হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। ওইদিনই কুখ্যাত সমাজবিরোধী টোটন বিশ্বাসের ডেরায় ঢুকে তার দাদা তারককে খুনেও সে অভিযুক্ত। বছর খানেক আগে সাতসকালে চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের কাছে মহাত্মা গাঁধী রোডে এক ট্রাক-মালিকের বাড়িতে ঢুকে তার চালককে গুলি করে খুনের অভিযোগও ওঠে বিশাল ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। তার কয়েক মাস পরে গুপ্তিপাড়ায় এসটিকেকে রোডে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়। সেখানে বিশাল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।
এ সবের মধ্যেই চুঁচুড়ার মার্কণ্ডগলিতে দিদির বাড়িতে যাতায়াতের সূত্রে সেখানকার এক তরুণীর সঙ্গে বিশালের পরিচয় হয়। তরুণীকে সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিশালের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক নানা কাজের অভিযোগ শুনে তরুণীর পরিবার ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এর মধ্যে দুষ্কর্মের অভিযোগে বিশাল জেলে যায়। এ দিকে, বিষ্ণুর সঙ্গে ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠতা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এতে বিশাল খেপে যায়। জেলে বসেই বিষ্ণুকে খুনের পরিকল্পনা করে। কিছু দিন আগে জেল থেকে ছাড়া পায় সে। তখন থেকেই বিষ্ণুর গতিবিধির উপরে নজর রাখতে শুরু করে বিশাল। গত ১০ অক্টোবর বিশালের দলবল বিষ্ণুকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ। তারপর থেকেই বিশাল পলাতক। বিষ্ণুকে যে খুন করা হয়েছে, সোমবারই সে কথা প্রকাশ্যে আসে। খুনের ধরন শুনে মনোবিদরাও আক্রোশের কথাই বলছেন। মনোবিদ রুমা পাল মনে করেন, ‘‘এই ধরনের আক্রোশ এক দিনে গড়ে ওঠে না। ছোটবেলায় সে হয়তো কোনও ঘটনায় নিকটজনের কাছে কাঙ্ক্ষিত জিনিস চেয়েও পায়নি। অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছে। তা থেকেই প্রতিশোধের মানসিকতা জন্মায়। ক্রমে তা বাড়তে থাকে। প্রতিশোধ নিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।’’ আর এক মনোবিদ মোহিত রণদীপের কথায়, ‘‘পৌরুষ, অহং আঘাত পাওয়ায় হিংস্রতার বিষয়টি খুনের ধরনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাকে টক্কর দিয়ে অন্য কেউ তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দখল করবে, এটা সে মানতে পারেনি বা পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy