Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Police

বিধি কার্যকর করতে কি ‘অতি সক্রিয়’ পুলিশ, প্রশ্ন

আইন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পারেন না। পুলিশের সেই এক্তিয়ার নেই। যদিও পুলিশের বক্তব্য, ওঠ-বস করার সাজা তারা কাউকে দেয় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৭:১৫
Share: Save:

সচেতনতার পাঠ জরুরি। কিন্তু তার জন্য পুলিশ কি আইনের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারে? প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত উঠেই গেল।

ইদানিং মাস্ক না-পরে পথে বেরনো অনেককে পুলিশের সামনে কান ধরে ওঠ-বোস করতে দেখা যাচ্ছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় এই ছবি সে ভাবে দেখা না-গেলেও গ্রামীণ হুগলিতে তা দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। অভিযোগ, করোনা-সংক্রমণ রুখতে মাস্কের ব্যবহার যে কত জরুরি, তা বোঝাতেই নাকি পুলিশের এই ‘দাওয়াই’। প্রশ্ন উঠছে, জনগনকে ‘শিক্ষা’ দিতে এই পদক্ষেপ কি আদৌ করতে পারেন আইন-রক্ষকেরা!

আইন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পারেন না। পুলিশের সেই এক্তিয়ার নেই। যদিও পুলিশের বক্তব্য, ওঠ-বস করার সাজা তারা কাউকে দেয় না। আইনি পদক্ষেপ এড়াতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেকে কানধরে ওঠ-বস করে ছাড়া পেতে চায়।

মাস্ক না পরলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা (সরকারি নির্দেশ প্রচার হওয়ার পরেও তা অমান্য করা) এবং ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা যায়।

অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ সাজা দিতে পারে না। আইনভঙ্গকারীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠাতে পারে। আইনের ধারা মোতাবেক আদালতের কাছে অভিযোগ উপস্থাপনা করতে পারে। অপরাধ প্রমাণিত হলে আদালত সাজা দেবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মত হল, আইন ভাঙলে মোটরযান আইনে পুলিশ যেমন স্পট ফাইন নিতে পারে, এ ক্ষেত্রেও তেমনটা করা গেলে ভাল হত। যাঁরা অমান্য করছেন, তাঁরা ভয় পেয়ে আইনকে মান্যতা দিতেন।’’

মাস্ক না-পরে বেরনোয় রবিবার গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে কান ধরে ওঠ-বস করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। তাঁদের মধ্যে এক জন সোমবার বলেন, “মাস্ক ছিল না আমাদের। পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কান ধরে ওঠ-বস করায় মুক্তি পেয়েছি।” অন্যজনের কথায়, “অত লোকের সামনে লজ্জা পেয়েছি। নিজের দোষও বুঝতে পেরেছি। তা ছাড়া ৪০০ টাকা জরিমানা হাঁকছিল। এই বাজারে জরিমানা বা কেস খাওয়ার চেয়ে কান ধরে ওঠ-বস করাই শ্রেয় মনে হয়েছিল।”

শুধু গোঘাট নয়, গত চার মাস ধরে আরামবাগের গৌরহাটি মোড়, কালিপুর মোড়, পল্লিশ্রী মোড়, খানাকুল, এবং পুরশুড়ার বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন রাস্তায় হামেশাই পুলিশের সামনে কান ধরে ওঠ-বস করতে দেখা গিয়েছে মাস্ক না-পরে পথে বেরনো অনেককে। যদিও তাঁদের একাংশ বলছেন, “পুলিশ একটু বাড়াবাড়ি করলেও তাতে উপকার হয়েছে।’’ এক জন বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে লোকে এখনও আমাকে নিয়ে মজা করে। তবে ভয়ে সকলেই মাস্ক কিনেছে।”

‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগের জবাবে কী বলছে পুলিশ?

হুগলির পুলিশসুপার (গ্রামীণ) তথাগত বসু কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। যদিও এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাসের দাবি, “পুলিশ কখনই কাউকে কান ধরে ওঠ-বস করতে বলে না। আইনি পদক্ষেপের ভয়ে বা ভুল বুঝতে পেরে আইভঙ্গকারীরা ক্ষমা চেয়ে নেন।’’

একটি নাগরিক সংগঠনের কর্তা তথা আইনজীবী শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘যাঁরা মাস্ক না-পরে বেরোচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অন্যায় করছেন। অবিবেচকের মতো কাজ করে সমাজকে বিপদে ফেলছেন। মানুষকে বোঝাতে গিয়ে পুলিশ হয়রান হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে সভ্য সমাজে প্রকাশ্য রাস্তায় ওঠ-বস করানোর ঘটনা সমর্থন করা যায় না। আইন মোতাবেক কড়া সাজার ব্যবস্থা করুক পুলিশ।’’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘পুলিশ সকলের ক্ষেত্রে একই মনোভাব দেখাতে পারছে তো? রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলেও তো মাস্ক না-পরে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। সেখানে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। সেখানে কি পুলিশ ওই পদক্ষেপ (ওঠ-বস) করতে পারবে?’’

মানবাধিকার কর্মী তথা এপিডিআর-এর জেলা সভাপতি অমিতদ্যুতি কুমারের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি অমানবিক। পুলিশ প্রয়োজনে কাউকে ধরে আদালতে পাঠাক। আদালত ব্যবস্থা নেবে এই ক্ষেত্রে। তবে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে মানুষের সচেতন হওয়ায়ও জরুরি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে মাস্ক না-পরে রাস্তায় বেরনোয় ১২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১,৫০০ মাস্ক বিলি করা হয়েছে। মাস্ক না-পরে পথে বেরিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ৬০ জন ক্ষমা চেয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Police Masks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy