Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাড়ি প্রকল্পের কাটমানি, ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ

তেমনই অভিযোগ তুলে রবিবার সকালে গোঘাট-২ ব্লকের পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের এক বর্তমান এবং এক প্রাক্তন সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন উপভোক্তারা।

ঝামেলা: পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

ঝামেলা: পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা সরাসরি আসে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তা থেকেও ‘কাটমানি’!

তেমনই অভিযোগ তুলে রবিবার সকালে গোঘাট-২ ব্লকের পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের এক বর্তমান এবং এক প্রাক্তন সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন উপভোক্তারা। সেই বিক্ষোভে শামিল হন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের কয়েকশো শ্রমিকও। তাঁদের অভিযোগ, ওই প্রকল্পের মাস্টার-রোলে শ’য়ে শ’য়ে ভুয়ো শ্রমিকের নাম ঢুকিয়ে সরকারি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে ওই দুই নেতানেত্রীর নির্দেশে। পুলিশ এসে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলির টাকা মানুষের কাছে ঠিক ভাবে পৌঁছে না-দিয়ে এবং সেই প্রকল্পগুলি থেকে তৃণমূল নেতাদের একাংশ ‘কাটমানি’ নেওয়ায় লোকসভা ভোটে ঘাসফুলকে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হয়েছে বলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা। সেই কাটমানি ও তোলাবাজির টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।

তৃণমূল পরিচালিত বিরোধীশূন্য পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার বহড়াশোল গ্রামের ১১৮ নম্বর সংসদের বর্তমান সদস্য সায়মা বেগম এবং পাশের ১১৯ নম্বর সংসদের প্রাক্তন সদস্য আয়ুব আলি খানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের টাকায় থাবা বসানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় সাহস করে এ বার তাঁরা সেই টাকা ফেরত চাওয়া শুরু করলেন। উপভোক্তাদের অভিযোগ, বাড়িপিছু এক-এক জনের কাছ থেকে ১২ হাজার থেকে ৩২ হজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বিডিওর কাছেও লিখিত অভিযোগ জানানো হবে।

তিনটি কিস্তিতে (৪৫ হাজার, ৪৫ হাজার এবং ৩০ হাজার) ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আসে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ১১৮ নম্বর সংসদের বাসিন্দা মোস্তাফা খানের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তাঁর স্বামী শাজাহান বলেছিলেন, আমার নাম তালিকায় অনেক পরে আছে। কোন বছরে বাড়ি তৈরির টাকা পাব, তার ঠিক নেই। এ বছরই বাড়ি করার জন্য ওই প্রকল্পে সুবিধা পেতে ওঁদের দাবি মতো ১৩ হাজার টাকা দিয়েছি।” ওই সংসদের আরও দুই উপভোক্তা ইসারিফল খান এবং সুবীর খানের দাবি, তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে ২০ হাজার এবং ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আবার যাঁরা বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১১৯ নম্বর সংসদের সন্টু খান, মসিদ খান, লালন খানদের অভিযোগ, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আয়ুব আলি খান মাথাপিছু ১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অনেক অনুরোধেও এক পয়সাও কমাননি। বাড়ি সম্পূর্ণ করতে তাঁদের ধার করতে হয়।

অভিযোগ মানেননি সায়মা এবং আয়ুব। সায়মার দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের কিছুদিন পরেই লোকসভা ভোট ঘোষণা হল। আমি কাজের সুযোগই পাইনি। টাকা নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কী করে! যড়যন্ত্র করে আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে।” একই সুরে আয়ুবের দাবি, ‘‘সিপিএম এবং বিজেপি পরিকল্পনা করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারও দাবি করেন, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সিপিএমের ঘরছাড়ারা গ্রামে ফিরে বিজেপির উস্কানিতে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে।”

সিপিএম নেতৃত্ব বিধায়কের অভিযোগ মানেননি। জেলা কমিটির সিপিএম সদস্য অরুণ পাত্রের দাবি, ‘‘ওখানে আমাদের লোক কোথায়? লোকসভা নির্বাচনে বহড়াশোলে ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল। গ্রামবাসীরই একজোট হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’ প্রায় একই বত্তব্য বিজেপির আরামবাগ সাংগঠিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষেরও।

বিডিও অরিজিৎ দাস জানিয়েছেন, উপভোক্তাদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Pradhan Mantri Awas Yojana Goghat গোঘাট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy