কামারপুকুর নয়নতারা বিদ্যালয়ের কাছে তুবড়ি পোড়ানো হচ্ছে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
বাজির ‘বিষ’ থেকে রবিবারেও কার্যত মুক্তি পেল হুগলি জেলা। সন্ধ্যার পর থেকে কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এলেও তা নগণ্য বলে মনে করছেন এই জেলার পরিবেশকর্মীরা।
হুগলিতে বহু জায়গায় বাজি তৈরি হয়। ডানকুনির কালীপুর, চণ্ডীতলার বেগমপুর, হরিপালের মালপাড়া প্রভৃতি জায়গায় তৈরির পাশাপাশি বাজির বাজারও বসে। কোভিড সংক্রমিতদের কথা ভেবে হাইকোর্ট সব ধরনের বাজি পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় এ বার ওই সব জায়গায় বাজার বসেনি। তবে তার আগে কিছু পরিমাণ বাজি খোলা বাজারে এবং সেখান থেকে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। পরে কিছু ক্ষেত্রে চোরাগোপ্তা ভাবে বাজি বেচাকেনা চলে বলে অভিযোগ।
সেই কারণে বাজির উৎপাত থেকে কতটা মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে পরিবেশকর্মীদের অনেকে সন্দিহান ছিলেন। তাঁরা এখন বলছেন, রবিবার রাত ৮টা পর্যন্ত যে পরিমাণে বাজি পুড়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় তা যৎসামান্য। নিজেদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁরা খুশি। হাইকোর্টের রায় কার্যকর করা নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’-এর হুগলি সমন্বয়। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক গৌতম সরকার বলছেন, ‘‘বহু মানুষ সচেতন ভাবে বাজি ফাটাননি।
অনেকে কেনার সুযোগ পাননি বলে ফাটাননি। সচেতন ভাবে যাঁরা ফাটাননি, তাঁদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে যেতে হবে।’’
রবিবার সন্ধ্যায় ত্রিবেণী, চুঁচুড়া স্টেশনের আশপাশে, বুনো কালীতলায়, শ্রীরামপুরের মাহেশে বাজি পুড়েছে বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে অভিযোগ আসে। আরামবাগেও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় বাজি ফেটেছে। পুলিশের বক্তব্য, আড়ালে-আবডালে অল্প বাজি ফেটেছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাজি পোড়ানোর আনন্দের থেকে জীবনের দাম অনেক বেশি। আদালত এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে রক্ষাকর্তার ভূমিকা পালন করেছে। জনগণও বিষয়টি অনুধাবন করেছে। তাই কম সংখ্যক বাজি পুড়েছে।’’ পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে সামান্য বিচ্যুতি হয়েছে, প্রশাসন আর কিছুটা তৎপর হলে সেটুকুও হত না।’’ তিনি জানান, বিভিন্ন আবাসনের ছাদ থেকে প্রচুর বাজি পোড়ানো হয়। এ বার হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে কয়েকটির কর্তৃপক্ষ বা পরিচালন সমিতির তরফে ছাদে বাজি না-পোড়ানোর জন্য রীতিমতো নোটিস সেঁটে দেওয়া হয় বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন।
শনিবার সন্ধে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাওড়ার গ্রামীণ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজি ফাটে। তার পরে কমে যায়। রবিবার সন্ধে পর্যন্ত বাজি কার্যত ফাটেনি। ফলে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সাধারণ মানুষ এবং পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলির দাবি, তারা বাজি ফাটানো রুখতে প্রচার চালিয়েছেন। পুলিশকে জানিয়েছেন। তার ফলেই প্রকোপ কিছুটা হলেও কমে। পুলিশের বক্তব্য, বাজির প্রকোপ কম ছিল। বাজি পোড়ানো নিয়ে কোনও অভিযোগও আসেনি।
‘যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্র’ নামে কোন্নগরের একটি সংস্থার উদ্যোগে কালীপুজোর রাতে শব্দ ও বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। সংস্থার তরফে জয়ন্ত পাঁজা বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে জিটি রোডের ধারে বা মাইকের সামনে শব্দ মাপা হয়েছে। আতশবাজি পুড়েছে, এমন জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রা মাপা হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট জায়গার মাত্রা কিছুটা বেশি দেখিয়েছে। সার্বিক ভাবে তা অনেক কম ছিল বলেই মনে হয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘নির্দিষ্ট জায়গায় আরও নিবিড় ভাবে এই পরীক্ষা করা দরকার। সেই চেষ্টা করব। মনে হচ্ছে, কিছু জায়গায় এমনিতেই শব্দ বা বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি। বাজি পুড়লে তা মাত্রাছাড়া হয়ে যায়। বাজির মরসুম তো বটেই, সাধারণ সময়েও এ দিকে সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy