ফাইল চিত্র।
অনেকে অবাক। অনেকে বিভ্রান্ত, ক্ষুব্ধও।
হুগলির ২১টি জায়গাকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে ওই জ়োন বাছাই হল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে নানা দিক থেকে। কোনও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে এখনও কারও করোনা ধরা পড়েনি। অথচ, এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হয়েছে। আবার যেখানে করোনা ধরা পড়েছে, সেই এলাকা ছাড় পেয়েছে, এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরাও।
এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হওয়ায় শুক্রবারই সিঙ্গুরের মির্জাপুর-বাঁকিপুর পঞ্চায়েতের জগৎনগর গ্রামে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। ওই গ্রামের এক যুবক গত ১৩ জুন মুম্বই থেকে ফেরেন। ১৪ দিন গৃহ-নিভৃতবাসের পরে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখনও রিপোর্ট মেলেনি বলে ওই যুবক জানান। ২৮ জুন সিঙ্গুর ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। চলতি মাসের ৮ তারিখ ছাড়া হয়।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রামে একজনেরও করোনা ধরা পড়েনি। অথচ গ্রামকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। এ দিন তাঁরা বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহকুমাশাসক (চন্দননগর) মৌমিতা সাহাকে তাঁদের আপত্তির কথা জানান। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু এলাকা পরিদর্শনে যান। তৃণমূলের সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
শ্রীরামপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পাড়া গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা, আইনজীবী দীপক ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের শহরে অনেক জায়গাতেই করোনা হয়েছে বলে শুনতে পাচ্ছি। আমাদের এখানে একটা আবাসনেও হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে শুধু এখানেই লকডাউন করা হল, জানি না।’’ একই কারণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে উত্তরপাড়ায়। লরেন্স স্টিট, জে কে স্ট্রিট, নিউ স্টেশন রোড এবং ভদ্রকালী পারমার স্কুল লাগোয়া এন সি সাহা স্ট্রিট গণ্ডিবদ্ধ হয়েছে। শান্তিনগর এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘কাঁঠালবাগান বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় করোনা ধরা পড়েছে নিশ্চিত জানি। এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। প্রশাসন ওইসব এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করেনি।’’ রিষড়া, চন্দননগর, চুঁচুড়া-সহ অনেক জায়গা থেকে একই অভিযোগ এসেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে যে সব জায়গায় করোনা রোগী পাওয়া গিয়েছে, তার নিরিখে এলাকাগুলি চিহ্নিত করেছি।’’ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও-ও বলেন, ‘‘যে সব জায়গায় করোনা ছড়িয়েছে, সেই সব এলাকাকেই গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘করোনা যখন চারিদিকে ছেয়ে গিয়েছে, তখন জেলা প্রশাসন এক-একটা ছোট জায়গা ধরে লকডাউন করল। এতে সুফল মিলবে না। উল্টে বিভ্রান্তি বাড়ছে।’’ বিজেপি-র শ্রীরামপুর মণ্ডলের সাংগঠনিক সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় লকডাউন করে সুফল মিলবে না।’’
‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকার তালিকায় নাম না-থাকা সত্ত্বেও পুলিশ শুক্রবার হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় কয়েকটি জায়গা সিল করেছে। রাজাপুর থানার বানীবন শাসমল পাড়া এবং খলিশানিতে দু’টি বাড়ির সামনের রাস্তা সিল করা হয়। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের যদুরবেড়িয়া সিংহরায় তলায় একটি বাড়িও সিল হয়। এগুলি ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকার তালিকায় ছিল না বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে, প্রশ্ন উঠেছে, ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা ঘোষণার মাপকাঠি কী? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, কোনও এলাকায় করোনা রোগী পাওয়া গেলে সেই এলাকাকে ‘গণ্ডিবদ্ধ’ করা হয়। যতদিন পর্যন্ত না সেই রোগীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, ততদিন এলাকা ‘গণ্ডিবদ্ধ’ থাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, উলুবেড়িয়ার যে এলাকার নাম তারা পাঠিয়েছিল, সেগুলির অধিকাংশই গণ্ডিবদ্ধ এলাকার তালিকায় নেই। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বাদ পড়া এলাকাগুলি তাঁরা সিল করেছেন। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, পুলিশ, বিভিন্ন ব্লক, পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর থেকে আসা তালিকা দেখেই ৫৬টি এলাকাকে ‘গণ্ডিবদ্ধ’ করা হয়েছে। সাঁকরাইলের পাছালপাড়া গণ্ডিবদ্ধ এলাকার আওতায় রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে করোনা-আক্রান্ত কয়েকজন রোগী ছিলেন ঠিকই, তবে তাঁরা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy