পরিদর্শন: পুকুর বুজিয়ে আবাসন তৈরির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে প্রশাসনিক আধিকারিকরা। উত্তরপাড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ফাইল ছবি
সরকারি উদ্যোগে পুকুরসুমারি চলছে। অথচ, তার মধ্যেই হাওড়া জেলায় অবাধে পুকুর চুরি হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ডোমজুড়ের শাঁখারিদহ মৌজায় ৩৩ শতক পুকুর বুজিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে মালিকদের বিরুদ্ধে। জগৎবল্লভপুরের কৃষ্ণনন্দপুরে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থাকা পুকুরও প্রায় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।
কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?
জেলা প্রশাসন যা বলছে, তাতে একটা কারণ যেমন দীর্ঘসূত্রিতা, তেমনই রয়েছে দু’রকম আইনের জট। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একটি আইন বলছে, ভূমি দফতরের রেকর্ডে থাকা পুকুর কোনও মতে ভরাট করা যাবে না। কিন্তু সেটি যদি জমি হিসাবে রেকর্ড হয়ে থাকে তা হলে, ওই আইনে কিছু করা যায় না। সেই ফাঁক ভরাট করতে ১৯৮৪ সালে মৎস্য দফতর নতুন আইন করে। যা সংশোধন করা হয় ২০০৮ সালে। তাতে বলা হয়, কোনও পুকুর বা জলাশয় যদি জমি হিসাবেও রেকর্ড হয়ে থাকে, তা হলেও ভরাট করা যাবে না। তেমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি দফতরের আইনে পুকুর ভরাট কিছুটা রোধ করা গেলেও বুড়ো আঙুল দেখানো হয় মৎস্য দফতরের আইনটিকে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সাধারণত পুকুর বা জলাশয় ভরাট শুরু হলে তবে প্রথমে অভিযোগ দায়ের হয় ভূমি দফতরে। ওই দফতর রেকর্ড দেখে। সেই প্রক্রিয়ায় সময় যায়। তার মধ্যে পুকুরটি কার্যত ভরাট হয়ে যায়। যদি দেখা যায়, জমির রেকর্ডে সেটি পুকুর, তা হলে ভূমি দফতর সরাসরি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। রয়েছে জেল-জরিমানার সাজাও।
কিন্তু যদি দেখা যায়, সেই পুকুর রেকর্ডে জমি হিসাবে রয়েছে, তখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় মৎস্য দফতরকে। গোলমাল বাধে তখন। মৎস্য দফতর তদন্ত করলেও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যত কিছুই পায় না। কারণ, তাদের কাছে কোনও নথি নেই। যদিওবা পুকুরটি ভরাটের প্রমাণ মেলে, তখন ওই দফতর শুধুমাত্র জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট করে। কারণ, সরাসরি কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা মৎস্য দফতরের নেই।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিডিওকে এফআইআর করতে বলা হয়। কিন্তু বিডিওদের হাতে মৎস্য আইন মোতাবেক এফআইআর করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিডিও-দের একাংশ জানিয়েছেন, জেলাশাসকেরই এফআইআর করার কথা। কিন্তু জেলাশাসক তাঁর হয়ে বিডিওকে এই ক্ষমতা ন্যস্ত করছে, সেটা কোনও নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয় না। এই ব্যবস্থার সুযোগ নেয় পুকুর ভরাটকারীরা। তারা আদালতে জামিন পেয়ে যায়। পরে মামলায় প্রশাসন বা মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে তদ্বিরও করা হয় না।
বিডিওদের একাংশ মনে করছেন, মৎস্য দফতরের আইন প্রয়োগের দুর্বলতা দূর করা না হলে পুকুর ভরাট বন্ধ করা যাবে না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘পুকুর সুমারি শেষ হয়ে গেলে অনেকটা কাজ এগিয়ে যাবে। তারপরে কড়া হাতে দমন করা হবে পুকুর ভরাট।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্য ভূমি দফতরের নির্দেশে মাস দুয়েক ধরে হাওড়ায় পুকুরসুমারি চলছে। পুকুরগুলির মৌজাভিত্তিক মানচিত্র তৈরি হচ্ছে। তা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে পঞ্চায়েত অফিস, ব্লক প্রশাসন এবং ব্লক ভূমি দফতরে। যাতে কোনও পুকুর বুজিয়ে ফেলা হলে তা গ্রামবাসীরা এক নজরে জানতে এবং অভিযোগ জানাতে পারেন।
সেই কাজের মধ্যেই ডোমজুড়ের শাঁখারিদহ মৌজার পুকুরটি ভরাটের অভিযোগ ওঠে। ভরাটের বিরুদ্ধে যিনি আন্দোলন করছেন, সেই জাকির মুফতি বলেন, ‘‘চার মাস ধরে ছুটোছুটি করেও পুকুর ভরাট বন্ধ করতে পারিনি। মৎস্য দফতরের তদন্তে যদিও বা পুকুর ভরাট প্রমাণিত হল, তবু অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গেল। ফের তার শুরু করেছে নির্মাণকাজ। এ তো প্রহসন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy