শ্রীরামপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে ছড়ানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যের বহু গ্রন্থাগার। তার উপরে করোনার থাবা। গত মার্চ মাসের শেষ দিকে লকডাউনের শুরুতে সেই যে গ্রন্থাগার বন্ধ হয়েছে, এখনও খোলেনি। এই অবস্থায় বন্ধ ঘরে কেমন আছে গ্রন্থাগারের তাক, আলমারিতে ঠাসা বই? পুঁথি, স্বাধীনতা সংগ্রামের নথি, মূল্যবান পান্ডুলিপির চেহারা আরও বিবর্ণ হয়েছে? হুগলি জেলায় পাঠকদের একাংশ এই প্রশ্ন তুলছেন। গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
জেলা গ্রন্থাগারিক ইন্দ্রজিৎ পানের বক্তব্য, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতির জন্য গ্রন্থাগার চালু করা যাচ্ছে না ঠিকই। তবে, বহু গ্রন্থাগারে কর্মী, পরিচালন সমিতির লোকজন, কিছুক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষ ভালবেসে, আন্তরিক ভাবে কিছু দিন অন্তর গ্রন্থাগার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছেন। ন্যাপথলিন দিয়ে বই সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’’
হুগলিতে ১৫৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে। এর সিংহভাগ গ্রামাঞ্চলে। করোনা-কালে অনুমতি না মেলায় পাঠকরা গ্রন্থাগারে যেতে পারছেন না। গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের একাংশের বক্তব্য, পাঠকেরা বই নেড়েচেড়ে দেখেন। বাড়িতে নিয়ে যান। বই হাতবদল হয়। তাতে বই ভাল থাকে। তা ছাড়াও গ্রন্থাগারের কর্মীরা ঝাড়পোছ করেন। পুরনো বই রাসায়নিক দিয়ে ভাল রাখার চেষ্টা করা হয়। যদিও অল্প সংখ্যক কর্মী, অর্থ এবং পরিকল্পনা ও পরিকাঠামোর অভাবে সেই কাজ ভাল ভাবে হয় না বলে অভিযোগ। লকডাউন পরিস্থিতিতে সেটুকুও হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
জেলার একটি গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘পাঁচ মাস হয়ে গেল গ্রন্থাগারের দরজা-জানলা বন্ধ। হাওয়া-বাতাস ঢুকছে না। বর্ষায় স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। বই ভাল থাকে? রাসায়নিক দিয়ে বই সংরক্ষণ দূরঅস্ত, ঝাড়পোছটুকু হচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক বই নষ্টের আশঙ্কা হচ্ছে।’’ দেড়শো বছর ছুঁইছুঁই শ্রীরামপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রায় ৪৫ হাজার বই আছে। কর্তৃপক্ষ জানান, বই নষ্ট তো হচ্ছেই। তার উপরে আমপানে ছাদের দরজা, জানলার কাচ ভেঙে বৃষ্টির জল ঢুকে আরও ক্ষতি হয়েছে। গ্রন্থাগারের পরিচালন কমিটির সম্পাদক অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক বইয়েরই অবস্থা খারাপ। দু’-একবার সাফাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। ক’দিন আগে চুন ছড়িয়ে লঙ্কাপোড়া দেওয়া হয়েছে যাতে পোকা নষ্ট হয়। কিন্তু এ ভাবে কিছুই হবে না? বই বাঁচাতে গ্রন্থাগার খোলার অনুমতি দেওয়া হোক।’’সদর মহকুমায় একাধিক গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা এক গ্রন্থাগারিকের কথায়, ‘‘আমরা পরিস্থিতির শিকার। কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ করব।’’ বই সংরক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে চন্দননগরের বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের তরফে গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, ওই দফতরের প্রধান সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলির তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু দুষ্প্রাপ্য বই, পুঁথি, পত্রপত্রিকা, পান্ডুলিপি, দুর্মূল্য সংগ্রহ ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। অবিলম্বে কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করে এই সম্পদ যথাযথ ভাবে রক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।’’
গুপ্তিপাড়ার শতবর্ষপ্রাচীন শিশির বাণীমন্দির পাঠাগারের ক্ষেত্রে একই দাবি জানিয়েছেন সুব্রত মণ্ডল, সুজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতো গ্রামবাসীরা। সুজিতের কথায়, ‘‘বই বাঁচাতে আমাদের কোনও দায়িত্ব দেওয়া হলে সাগ্রহে তা পালন করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy