Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
বড়দিনের আনন্দ

নৌকায় পিকনিক থেকে কৃত্রিম ঢেউয়ে ডুব

উত্তুরে হাওয়ার মধ্যেই কোথাও মাঝগঙ্গায় নৌকায় মাতামাতি। কোথাও আবার যেন হরিণের ছবি তোলার প্রতিযোগিতা! কোথাও ময়ূরের নাচ দেখার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, কোথাও মাংসের স্বাদ চেখে দেখার জন্য হুড়োহুড়ি! দিনভর সূর্যের দেখা প্রায় মেলেইনি। তাতে কী! উত্তুরে হাওয়া গায়ে মেখেই শুক্রবার বড়দিনে পথে নামলেন মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

উত্তুরে হাওয়ার মধ্যেই কোথাও মাঝগঙ্গায় নৌকায় মাতামাতি। কোথাও আবার যেন হরিণের ছবি তোলার প্রতিযোগিতা!

কোথাও ময়ূরের নাচ দেখার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, কোথাও মাংসের স্বাদ চেখে দেখার জন্য হুড়োহুড়ি!

দিনভর সূর্যের দেখা প্রায় মেলেইনি। তাতে কী! উত্তুরে হাওয়া গায়ে মেখেই শুক্রবার বড়দিনে পথে নামলেন মানুষ। হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার পিকনিট স্পট এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উপচে পড়ল ভিড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা— আনন্দে মেতে উঠলেন আট থেকে আশি।

প্রতি বছরের মতো এ বারও হুগলির ব্যান্ডেল চার্চ এ দিন বন্ধ ছিল। ফলে, ভিতরে ঢুকতে না পারলেও গির্জা চত্বরে সাজানো যিশুর জন্ম-কাহিনি দেখতেই ভিড় জমান দর্শকেরা। হুগলি ছাড়াও হাওড়া, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা বা বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছিলেন এখানে। অনেকেই লাগোয়া গঙ্গার চরে চড়ুইভাতিতে মেতে ওঠেন। গির্জা চত্বরে দাঁড়িয়ে কলকাতার ভবানীপুরের বাসিন্দা সোহিনী মণ্ডল বলেন, ‘‘ভীষণ উপভোগ করলাম। তবে গির্জার প্রার্থনা-ঘরে ঢুকতে পারলে আরও ভাল লাগত।’’

গরমের দিনগুলিতে হুগলি স্টেশন লাগোয়া অ্যাকোয়ামেরিনা পার্ক জমজমাট থাকত। শীতের বড়দিনেও সেই এক ছবি। কৃত্রিম ঢেউ, ঝরনার জলে গা ভিজিয়ে হুল্লোড়। বিশালাকার বেলুনে ঢুকে জলে দাপিয়ে বেড়াল খুদেরা। বাঁশবেড়িয়ার কুমার মণীন্দ্র রায় পার্ক, রবীন মুখোপাধ্যায় পার্ক, সবুজদ্বীপ, চন্দননগরের কেএমডিএ পার্ক, নিউ দিঘা, সুয়াখাল পর্যটন কেন্দ্র, ছুটি পার্ক— ভিড় টানার নিরিখে পরস্পরকে যেন টেক্কা দিয়েছে! অশান্তি এড়াতে বিভিন্ন পার্ক এবং পর্যটনকেন্দ্রে ছিল পুলিশি নজরদারি।

খানাকুলের রাধানগরে রাজা রামমোহন রায়ের আমবাগানেও বসেছিল চড়ুইভাতির আসর। তবে, আরামবাগ মহকমার বাকি পর্যটন কেন্দ্র বা পিকনিক স্পটগুলিতে অন্য বছরের তুলনায় এ বার তেমন ভিড় হয়নি। পুলিশের হিসেবে গোঘাটের গড় মান্দারনে মাত্র হাজার তিনেক মানুষ এসেছিলেন। আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধের গায়ে শাল-সেগুন-শিশু গাছে ঘেরা চাঁদুর জঙ্গলে হাজার দেড়েক। তবে, দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর নদীর চর বরাবর চড়ুইভাতি হয়েছে যথারীতি।

একটি অনাথ আশ্রমের কচিকাঁচাদের নিয়ে একটু অন্য রকম বড়দিন কাটিয়েছে চণ্ডীতলা থানা। সিঙ্গুরের মির্জাপুর-বাঁকিপুরের ‘সবুজানন্দ’ নামে ওই অনাথ আশ্রমের কাজল পাল, কোয়েল দাস, রাজকুমারী পালের মতো ২২ জন ছেলেমেয়ে থানায় এসেছিল। কারও বয়স তিন বছর। কেউ পাঁচ। কেউ দশ। সকাল থেকেই গোটা থানা কার্যত তারাই দখল করে রাখে। ক্রিসমাসের গান করে। আবৃত্তি করল। কেক কাটাও হয়। তার পরে নাকে-মুখে কেকের ক্রিম মাখিয়ে মজা। ‘পুলিশকাকু’রা তাদের খেলনা, লজেন্স উপহার দেন। কেউ খুশিতে ‘ওসি-কাকু’র কোলে চড়ে বসে। কেউ আবার এ দিনই জানিয়ে দেয় বড় হয়ে সে পুলিশ হবে! দুপুরে থানাতেই খাওয়া-দাওয়া। তার পরে পুলিশই গাড়ি করে বাচ্চাদের পৌঁছে দিল তাদের আশ্রমে।

হাওড়ার গড়চুমুকের মিনি চিড়িয়াখানায় ঢোকার জন্য সকাল থেকেই লম্বা লাইন পড়ে। একদিকে দামোদর নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে চড়ুইভাতি, তার উপরে হরিণ, শজারু, কুমির, ময়ূর-সহ নানা পাখি দেখার হাতছানি। পর্যটকদের আটকায় কে! চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু পাঁচ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে চিড়িয়াখানা দেখার জন্য। বাইরে আরও বেশি মানুষ চড়ুইভাতিতে মাতেন বলে জানান জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু।

গাদিয়াড়া, নাওপালা, মহিষরেখা বা ভাগীরথীর তীরে ফুলেশ্বরের সেচ বাংলোতেও ভিড় ভালই হয়েছিল। মাইক-বক্সে গান, লোকজনের হইচইয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। তবে, গাদিয়াড়ায় পযটন দফতরের চড়ুইভাতির জায়গায় ভিড় বেশি হয়নি। সেখানকার এক কর্তার দাবি, মেরেকেটে হাজার খানেক মানুষ এসেছিলেন। কারণ হিসেবে মানুষ অত্যধিক ভাড়াকেই দায়ী করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ৫৫ জনের একটি দলের সঙ্গে এসেছিলেন সমর রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আগেই শুনেছিলাম ভাড়ার কথা। তাই ওখানে আর চড়ুইভাতি করতে ঢুকিনি। নদীর তীরে আয়োজন হয়।’’ ফুলেশ্বরের সেচ বাংলোয় পানীয় জল এবং শৌচাগারের অব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ।

তবে, সে সব ক্ষোভই ছিল সাময়িক। হই-হুল্লোড়, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া আর বেড়ানোর মজাই সকলকে ভরিয়ে দেয়। ফেরার সময় লোকের মুখে ‘মেরি ক্রিসমাস’।

অন্য বিষয়গুলি:

christmas howrah hoogly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy