Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
৭২ লক্ষ টাকার যন্ত্র পড়ে রয়েছে শেডে
Machine

উদ্যোগপতিকেই রাস্তা তৈরির ফরমান পঞ্চায়েতের

চণ্ডীতলা-২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা গুরুপদ ঘোষের একটি কারখানা আছে শীতলাতলায়।

এই বাক্সেই বন্দি সেই যন্ত্র। ছবি: দীপঙ্কর দে

এই বাক্সেই বন্দি সেই যন্ত্র। ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০১:৩৩
Share: Save:

ব্যাঙ্ক থেকে ৭২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে যন্ত্র কিনেছেন কারখানার মালিক। কিন্তু তা কারখানায় নিয়ে যেতে পারছেন না। ফেলে রেখেছেন ভাড়ায় নেওয়া শেডে। কারণ—পঞ্চায়েত ‘ফরমান’ জারি করেছে, যন্ত্রটিকে কারখানায় নিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিতে হবে ওই উদ্যোগপতিকেই। তা না-হলে অনুমতি দেওয়া যাবে না। বিপদে পড়ে প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়েছেন কারখানার মালিক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাস্তা তৈরির চার লক্ষ টাকা পাব কোথায়।’’

চণ্ডীতলা-২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা গুরুপদ ঘোষের একটি কারখানা আছে শীতলাতলায়। সেখানে রেল এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রকের নানা সংস্থায় ব্যবহারের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। সম্প্রতি তিনি কারখানা সম্প্রসারণের কাজে হাত দিয়েছেন। গুরুপদবাবুর দাবি, ৭২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে একটি যন্ত্র কেনেন তিনি। ওই যন্ত্রে তৈরি হবে বিশেষ ধরনের ব্লেড, যা এখন আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু সেই যন্ত্র কিনেই বিপাকে পড়েছেন গুরুপদ। ওই উদ্যোগপতি জানান, গত জুলাইয়ে বেঙ্গালুরু থেকে যন্ত্রটি ট্রেলারে চাপিয়ে তিনি চণ্ডীতলায় এনেছিলেন। গুরুপদবাবুর অভিযোগ, ‘‘তারপর থেকে কিছুতেই যন্ত্রটি কারখানায় নিয়ে যেতে পারছি না। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, যন্ত্রটি নিয়ে গেলে রাস্তা খারাপ হয়ে যাবে।’’ তারপর দীর্ঘদিন যন্ত্রটি রাস্তায় পাশে ওই ট্রেলারেই রাখা ছিল। পরে একটি শেড ভাড়া করে যন্ত্রটি সেখানে রেখেছেন গুরুপদ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে দরবার করলে তারা জানায়, আমাকেই রাস্তা তৈরি করে নিতে হবে। তারপর আমি যন্ত্রটি কারখানায় নিয়ে যেতে পারব।’’ গুরুপদর প্রশ্ন, ‘‘এই কাজ কি এক জন উদ্যোগপতির করার কথা? শিল্পের জন্য রাস্তা তৈরি বা পরিকাঠামো নির্মাণ করা তো রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। রাস্তা করতে হলে এখন চার লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। কোথা থেকে পাব টাকা?’’ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের কবিতা আটার বক্তব্য, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। স্থানীয় মানুষজন রাস্তা নিয়ে আপত্তি করছেন। আমরা পঞ্চায়েত থেকে (গুরুপদকে) বলেছি, ওই রাস্তা চার ইঞ্চি পুরু করার সমস্ত উপকরণ পঞ্চায়েত দেবে। কিন্তু ওই যন্ত্রটি নিয়ে গেলে ওই চার ইঞ্চি রাস্তাও আস্ত থাকবে না। তাই রাস্তা কতটা পুরু হলে শক্তপোক্ত হবে, ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে উনি সেই উপকরণ দিন।’’

পঞ্চায়েত প্রধানের সাফ কথা, ‘‘বাড়তি টাকা দিয়ে রাস্তা তৈরির সঙ্গতি পঞ্চায়েতের নেই।’’গুরুপদবাবু বলেন,‘‘ঋণের কিস্তি বাবদ ব্যাঙ্ককে প্রত্যেক মাসে মোটা টাকা দিতে হচ্ছে। মেশিনটি বসাতে পারলে কারখানায় আরও ছয় যুবক চাকরি পাবেন। এটা তো সকলেরই বোঝা উচিত।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনাথ ঘোষ বলেন,‘‘আমরা চাই কারখানা চলুক। কিন্তু পঞ্চায়েতের নিজস্ব আর্থিক সঙ্গতি তেমন নেই। তাই রাস্তাটি ওই শিল্পপতিকে করে নিতে বলা হয়েছে। রাস্তা নিয়ে আমাদের উপরে স্থানীয় মানুষের যথেষ্ট চাপ আছে।’’

বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া,‘‘স্থানীয় মানুষের চাপ আছে বলেই শিল্পপতিকে রাস্তা তৈরি করতে হবে, এটা কোনও কাজের কথা নয়। এলাকার মানুষের চাপ পুলিশ আর প্রশাসন সামলাবে। পঞ্চায়েতের সঙ্গতি না-থাকলে জেলাপরিষদ বা পূর্ত দফতরকে রাস্তা তৈরি করতে হবে। বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা হওয়া জরুরি।’’ আর মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) সম্রাট চক্রবর্তীর মন্তব্য,‘‘ওই শিল্পপতি প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে কী করা যায়, তার ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Machine Panchayat Entrepreneur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy