পদ্ধতি: বীজের জন্য এ ভাবেই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন জিরাটের এক চাষি। ছবি: সুশান্ত সরকার
পেঁয়াজের আগুন দাম। বাজারে গিয়ে ছেঁকা লাগছে গৃহস্থের। আর হুগলির বলাগড় ব্লকের পেঁয়াজ চাষিরা আক্ষেপ করছেন, সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে এই সময়ে পেঁয়াজ বেচে দু’টো বাড়তি পয়সা আসত ঘরে।
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রের হিসেব, হুগলিতে প্রায় ৩৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। অধিকাংশই বলাগড়ে। এ ছাড়াও, রয়েছে মগরা, হরিপাল, সিঙ্গুর-সহ অন্য ব্লক। ফসল ওঠার পরে পেঁয়াজ মাসছয়েক সংরক্ষণ করা যায়। সব মিলিয়ে জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র (লো-কস্ট অনিয়ন স্টোরেজ) রয়েছে ৭০টি। সবই চাষিদের ঘরে। তার মধ্যে চল্লিশেরও বেশি রয়েছে বলাগড়ে। তবু তা নামমাত্র বলে স্বীকার করছেন উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা। এ কথা মানছেন চাষিরাও। কারণ, ওই ‘স্টোর’গুলির মধ্যে বেশির ভাগই চাষিরা ব্যবহার করেন পেঁয়াজবীজ সংরক্ষণের জন্য।
অথচ, আলুর তুলনায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ অনেক সহজ। এতে হিমঘরের দরকার নেই। আলোর প্রয়োজন নেই। ফলে, বিদ্যুতের খরচ লাগে না। বাইরের হাওয়া-বাতাস প্রবেশ করতে পারলেই হল। দরকার শুধু ৩০ ফুট লম্বা, ২০ ফুট চওড়া এবং ১৫ ফুট উচ্চতার একটি ইটের ঘর। সেখানে কাঠের বা বাঁশের মাচায় গোছা করে ২৫ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ রাখা যায়। ঘর বানানোর খরচ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। তার অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দেয় বলে জানান উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা। তা হলেও কেন ওই কেন্দ্র ‘নামমাত্র’?
উদ্যানপালন দফতরের কর্তাদের দাবি, চাষিদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। চাষিরা নিজের বাড়ি বা জমিতেই ওই কেন্দ্র গড়তে পারেন। নিজেরা দেখভালও করতে পারবেন। তবে, গত কয়েক বছরে লাগাতার প্রচারে কিছুটা কাজ হয়েছে। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মৌটুসি ধর জানান, সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হুগলিতে ‘সুখসাগর’ প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ হয়। বীজ বসানো হয় কার্তিক-অঘ্রাণে। ফসল ওঠে ফাল্গুন-চৈত্রে। এখানকার পেঁয়াজবীজ রাজ্যের অন্যত্র এবং বিহার-বাংলাদেশেও যায়। কিন্তু জেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজে চাহিদা মেটে না। ফলে, ভিন্ রাজ্যের পেঁয়াজের উপরে নির্ভর করতে হয় জেলার বাজারগুলিকেও। কিন্তু অনেক সময়েই দাম না-ওঠায় বা অতিরিক্ত ফলনের জেরে চাষিরা অভাবী বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। সংরক্ষণ কেন্দ্র থাকলে সেই প্রবণতা রোধ করা যায় বলে মানছেন সব পক্ষই।
বলাগড়ের ঢাকছড়া গ্রামের চাষি সমীর ঘোষ ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে আমাদের উপকার হতো। আরও চাষি পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ হতেন। তাতে জোগান বাড়ত। নাসিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। আমি ঘরে বাঁশের চালায় কিছু পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখি বীজ তৈরির জন্য। তা থেকে নিজেদের চলে যায়। কিন্তু বিক্রির উপায় থাকে না।’’
জিরাটের প্রফুল্ল সরকার তিন দশক ধরে পেঁয়াজ চাষ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সমস্যা সংরক্ষণ। পেঁয়াজ রাখার জন্য একটা ঘর করেছি। তাতে ২৫ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছি। যেটুকু রাখতে পারি, তা বীজের জন্য। সংরক্ষণের ভাল ব্যবস্থা থাকলে বাজারগুলিতে দাম এতটা আকাশছোঁয়া হতো না।’’ একই বক্তব্য বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুবল মণ্ডলেরও। তিনিও বহু বছর পেঁয়াজ
চাষ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy