বেপরোয়া: ক্লাস না করিয়ে স্কুলের গেটের সামনে বসে শিক্ষিকােদর বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রধান শিক্ষিকাকে বেরিয়ে যেতে হবে, এই দাবিতে ক্লাস বয়কট করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুলের গেটের সামনে বসে রইলেন অন্য শিক্ষিকারা। ফলে, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন ক্লাস করতে পারল না পড়ুয়ারা। মিড-ডে-মিলও পেল না তাঁরা। বৃহস্পতিবার হুগলির পান্ডুয়ার রাধারানি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। সমালোচনা শুরু হয়েছে শিক্ষা মহলেও।
শিক্ষিকাদের দুই পক্ষের কাজিয়া মেটানো সাধ্যের বাইরে বলে জানান বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সদস্যরা। ওই কমিটির সভাপতি তথা পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই শিক্ষিকাদের দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হচ্ছে। দু’পক্ষকে নিয়ে কয়েক বার বসেছিলাম। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। প্রশাসনিক স্তরে মিটমাটের চেষ্টা করতে হবে।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই) লক্ষ্মীধর দাস বলেন, ‘‘ওখানে সমস্যা রয়েছে বলে জেনেছি। সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুত মিটে যাবে।’’
বৃহস্পতিবার নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু এবং পড়ুয়াদের নতুন বই দেওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রী এবং শিক্ষিকারা আসেন। সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী সরকার স্কুলে ঢোকেন। এর পরেই অন্য শিক্ষিকাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। তাঁরা দল বেঁধে গেটের বাইরের জড়ো হন। অনেকে রাস্তায় বসে পড়েন। দাবি জানাতে থাকেন, প্রধান শিক্ষিকাকে স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। না হলে তাঁরা ক্লাস করবেন না।
পরিস্থিতি দেখে ছাত্রীরা অবাক হয়ে যায়। ঘটনার কথা চাউর হওয়ায় বাইরে ভিড় জমে। পরিস্থিতির জেরে এ দিন মিড-ডে-মিল রান্না হয়নি। ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরির পরে ছাত্রীরা ফিরে যায়। বেলা আড়াইটে নাগাদ প্রধান শিক্ষিকা স্কুল ছাড়েন। কিছুক্ষণ পরে শিক্ষিকারা বাড়ির পথে হাঁটা দেন।
ওই শিক্ষিকাদের তরফে জয়ন্তী মল্লিক বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে থাকলে আমরা ক্লাস নেব না। ওঁর সঙ্গে এক প্রতিষ্ঠানে থাকতে চাই না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘উনি আমাদের প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছেন। তাই ভয়ে রয়েছি।’’ স্কুল থেকে বেরিয়ে তাঁরা ডিআই-এর কাছে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বলে জয়ন্তীদেবী জানিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষিকা কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার উপরে অন্য শিক্ষিকাদের রাগ। মাস তিনেক আগে ওঁরা আমাকে মারধর করায় আইনি পদক্ষেপ করি। ওই ঘটনার পরে স্কুলে যেতে পারিনি। তিন মাস পরে আজই প্রথম গেলাম। আমি ঢুকতেই ওঁরা ক্লাস বয়কট করলেন। গোটা বিষয়টি ডিআই-কে জানিয়েছি।’’
শিক্ষিকাদের কাজিয়ায় পড়াশোনা লাটে ওঠায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। এ দিন অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, শিক্ষিকারা এমন করলে ছাত্রীরা কী শিখবে? ঝুমা দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। শিক্ষিকাদের মধ্যে আকচাআকচিতে প্রায়ই পড়াশোনা হয় না। কোনও স্কুলে এমন চলতে পারে?’’
বিদ্যালয় সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই কাবেরিদেবীর সঙ্গে অধিকাংশ শিক্ষিকার বনিবনা হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে প্রধান শিক্ষিকার উদ্যোগে স্কুলে বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসে শিক্ষিকাদের হাজিরার জন্য। কিন্তু শিক্ষিকাদের একাংশ তার বিরোধিতা করেন। স্কুলে গাছ কাটা নিয়েও বিতর্ক হয়। স্কুল ছুটির আগেই শিক্ষিকাদের একাংশ বেরিয়ে যান বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে এ ব্যাপারেও তাঁদের বচসা হয়। মাস তিনেক আগে অন্য শিক্ষিকারা তাঁর গায়ে হাত তোলেন বলে প্রধান শিক্ষিকা অভিযোগ তোলেন। পুলিশেরও দ্বারস্থ হন। এর পরে দু’পক্ষের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy