মৃত্যুঞ্জয় বাগ।
ফের আলু চাষির মৃত্যুর অভিযোগ উঠল হুগলি জেলায়। আরামবাগ, গোঘাটের পর এ বার ধনেখালি। অভিযোগ, আলুর ফলন নিয়ে চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে মৃত্যুঞ্জয় বাগ (৬৯) নামে ওই বৃদ্ধের। তিনি ধনেখালির পারাম্বুয়া পঞ্চায়েতের সাহাবাজার এলাকার বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মরসুমে আলুতে লাভ করতে পারেননি মৃত্যুঞ্জয়বাবু। ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধও করতে পারেননি। ভেবেছিলেন, এ বার আলুতে লাভ হলে সে ঋণ শোধ করে দেবেন। কিন্তু এ বার ব্যাঙ্ক আর ঋণ দেয়নি। ফলে ধার করতে হয়েছিল অন্য জায়গা থেকে। ফাল্গুনের বৃষ্টিতে ব্যপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা।
মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি চাষের জমি গিয়েছিলেন। তখনই আঁচ করেন বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষতির কথা তিনি ভেবেছিলেন, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে আলুর। তারপরই তিনি ভেঙে পড়েন। শুক্রবার মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি। স্ত্রী নির্মলা বাগ বলেন, ‘‘মাঠ থেকে ফিরেই বুক চাপড়ে কাঁদতে শুরু করেন উনি। আসলে এ বার ঘরের সবকিছু দিয়েই তিনি চাষ করেছিলেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ভেঙে পড়েন।’’ রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় বুকের ব্যথা। পরিবারের লোকজন তাঁকে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যুঞ্জয়ের জামাই সৌমেন পাকড়ে বলেন, ‘‘গতবারের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি, তাই ব্যাঙ্ক ঋণ পাননি। তাই সোনাদানা বন্ধক রেখে, গরু বিক্রি করে চাষ করেছিলেন। কিন্তু সব ভেসে গিয়েছে। এই ধাক্কাটা নিতে পারলেন না।’’
গত এক সপ্তাহে হৃদরোগে আক্রান্ত মৃত্যু হয়েছে হুগলির আর দুই আলু চাষির। তাঁদের পরিবারও দাবি করেছে, মাঠের ক্ষতি দেখেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। আরামবাগ, গোঘাটের আলুচাষিদের প্রায় সকলেই এক অবস্থা। ব্যতিক্রম নয় ধনেখালিও। পারাম্বুয়া পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ আলু চাষিই মৃত্যুঞ্জয়ের মতো ক্ষতি সম্মুখীন। মাঠের আলু মাঠেই পচছে। যাঁদের কপাল ভাল, তাঁরা সামান্য কিছু আলু ঘরে তুলতে পেরেছেন। কিন্তু ক্ষতি তাঁদেরও যথেষ্ট।
মাত্র তিন বিঘা জমি রয়েছে বাগ পরিবারের। অন্যদের থেকে সাত বিঘা জমি নিয়ে মোট দশ বিঘা জমিতে আলু বুনেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। জাঁকিয়ে শীত পড়েছিল এ বার, ফলে আশা ছিল আলুর ফলন ভাল হবে। পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল না বলে, ফলন নষ্টের আশঙ্কাও ছিল না প্রথম দিকে। ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো আরও অনেকেই আশা করেছিলেন, এ বারের ফলনে সব ঋণ পরিশোধ করে ফেলতে পারবেন তাঁরা।
কিন্তু সে আশায় জল ঢেলেছে
অকাল বর্ষা।
এরপর কতটা ক্ষতিপূরণ করতে পারবেন চাষিরা সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy