Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Hooghly

নেতার ‘হুজ্জুতি’, পুলিশের দ্বারস্থ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ

বুধবার রাতে শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজারের কাছে জিটি রোডের ধারের নার্সিংহোমটিতে ওই ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

নার্সিংহোমে হুজ্জুতি করে বিল না-মিটিয়েই এক রোগিণীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল শ্রীরামপুরের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।
বুধবার রাতে শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজারের কাছে জিটি রোডের ধারের নার্সিংহোমটিতে ওই ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজেশ সাউ ওরফে কুকুয়া নামে ওই নেতা অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ওই নার্সিংহোমে অতিরিক্ত টাকা বিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগিণী আগে মারা গেলেও স্রেফ বিল করার কারণে দেরি করে মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়। তিনি এর প্রতিবাদ করেন।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। গোটা বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবার সন্ধ্যায় শহরের টিনবাজারের এক প্রৌঢ়াকে কেমোথেরাপির জন্য ভর্তি করানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি মারা যান। অভিযোগ, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শহরের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর রাজেশ দলবল‌ নিয়ে নার্সিংহোমে চড়াও হন।
নার্সিংহোমের ডিরেক্টর চিকিৎসক অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি মহিলা নার্সিং-স্টাফদের গালিগালাজ, সম্মানহানি করেন। ভাঙচুর করতে উদ্যত হ‌ন। যে চিকিৎসকের অধীনে মহিলা ভর্তি ছিলেন, তাঁকে ফোনে গা‌লাগা‌ল দেন। টাকা না দিয়েই ভোরে দেহ নিয়ে চলে যান।’’
নার্সিংহোমের তরফে গোটা বিষয়টি তৃণমূল নেতৃত্বকে জানানো হয়। শুক্রবার শ্রীরামপুর থানায় রাজেশ এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। অরূপবাবুর খেদ, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, ‌স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবন বাজি রেখে পরিষেবা দিচ্ছেন। তার প্রতিদানে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে নার্সিংহোম চালাব কী করে?’’
রাজেশের দাবি, ‘‘ওই মহিলাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে আমাদের ছেলেরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে গিয়েছিলেন। বিল করার জন্য ওঁদের দাঁড় করিয়ে রেখে এক ঘণ্টা পরে জানানো হয়, উনি মারা গিয়েছেন। এটা শুনে আমি যাই। এক-দেড় মিনিট ছিলাম। নিজের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যই প্রতিবাদ করেছি। শুধু বলেছি, টাকা দেওয়া হবে না।’’
বিল যে মেটানো হয়নি, তা স্বীকার করেছেন রাজেশ। অভিযোগ থাকলে পুলিশ-প্রশাসন বা মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ করলেন না কেন? রাজেশের জবাব, ‘‘এটাই ভুল হয়েছে।’’
রাজেশ সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রতিবাদের কথা বললেও এর আগে তাঁকেই অন্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। তিন বছর আগে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে আলট্রা-সোনোগ্রাফি বিভাগে পরিষেবা না-পেয়ে পথ অবরোধ করেন রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা। পুলিশের সামনেই রাজেশ রীতিমতো ধমকে-চমকে অবরোধ তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এ বারের ঘটনা নিয়ে শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সমর্থনযোগ্য নয়। কোনও অভিযোগ থাকলে মেডিক্যাল কাউন্সি‌লে জানাতে পারতেন। রাজেশের সঙ্গে কথা বলব।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রবীর ঘোষালের বক্তব্য, ‘‘রাজেশ যা করেছেন, ঠিক হয়নি। ওঁকে সেটা বলেছি। আইন মোতাবেক যা করার, পুলিশ করুক।’’
বর্তমান পরিস্থিতিতে নার্সিংহোমটি যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলে‌ন, ‘‘ওই নেতা তৃণমূলের ভাষাতেই কথা বলেছেন। ওঁদের আস্ফালনে নার্সিংহোম চা‌লানো যাবে কি‌না, ভাবতে হচ্ছে। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’ সিপিএম নেতা তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছে। চিকিৎসা যাতে বন্ধ না হয়, প্রশাসন নিশ্চিত করুক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Srerampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy