সোনু শর্মার মৃত্যুতে শোকার্ত পরিজন। ছবি: তাপস ঘোষ
বুধবার দুপুরে তেলেনিপাড়ার মালাপাড়া বাই লেনে ঢুকতেই ছেঁকে ধরল ভিড়। সকলেরই অভিযোগ, ডেঙ্গি মোকাবিলায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ভাড়াবাড়ির উঠোনে বসে সমানে কাঁদছিলেন বাসন্তী শর্মা। কয়েক ঘণ্টা আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তাঁর চব্বিশ বছরের ছেলে সোনু মারা গিয়েছেন। মহিলা ফুঁসে ওঠেন, ‘‘জানেন, নর্দমায় জল জমে থাকে। সারাক্ষণ মশার উপদ্রব। অথচ, তেমন ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। এলাকায় সাফাইও ঠিকমতো হয় না। আমি আট দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম ডেঙ্গিতে। আর ছেলেটা মরেই গেল।’’
বাসন্তীর পড়শিদেরও ক্ষোভ, উৎসবের মরসুমের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে জ্বর-ডেঙ্গি। দুর্গাপুজোর সময় থেকেই এই এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বর-ডেঙ্গি। কালীপুজো, ছটপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, কার্তিক পুজো কেটে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। মীরা চৌধুরী নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘প্রায় প্রতিটা বাড়িতে কারও না কারও জ্বর বা ডেঙ্গি হয়েছে। কোনও বাড়িতে একাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরছেন, তো অন্য এক জনকে ভর্তি হতে হচ্ছে।’’
সোনুকে শনিবার চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান। মঙ্গলবারই ডেঙ্গিতে শ্রীরামপুরের এক শিশুর মৃত্যুর পরে ফের এই মৃত্যুতে ডেঙ্গি রোধে পুরসভাগুলি কতটা তৎপর, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তেলেনিপাড়ার মালাপাড়া বাই লেন এলাকাটি ভদ্রেশ্বরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বাসিন্দাদের বেশির ভাগই জুটমিল শ্রমিক। তাঁদের দাবি, মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানো, মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া— পুরসভার তরফে সবই করা হচ্ছে। কিন্তু তা নামমাত্র।
এক যুবকের কথায়, ‘‘এত দিন ধরে এই পরিস্থিতি। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এখনও কী ভাবে মশার ঝাঁক উড়ে বেড়ায়?’’ হাসপাতালে মৃত সোনুর দেহ আনতে গিয়েছিলেন আকাশ চৌধুরী নামে পড়শি এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘মশার লার্ভা মারার তেল কেন, সাফাইও নিয়মিত হয় না। মাঝেমধ্যে আমরাই পরিষ্কার করি।’’ দু’টি শিশু-সহ ওই এলাকার অন্তত চার এখনও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।
নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি পুর কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান প্রলয় চক্রবর্তীর দাবি, প্রতিটি এলাকায় পুরসভার তরফে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারি বিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রচারও চলে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর পান্নালাল সাউয়েরও বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমাদের কোনও খামতি নেই। প্রতিদিন পুরকর্মীরা গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করে আনেন। মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানো হয়। মশা মারতে ধোঁয়াও দেওয়া হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খোঁজ নেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একশ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বাড়ির ভিতরেই জল জমে থাকে। সেখানে মশা জন্মায়। মানুষ সচেতন হলে সমস্যা থাকবে না।’’
ওই এলাকায় অনেক বাড়ির ভিতরে ঘর লাগোয়া ছোট নর্দমা রয়েছে। নর্দমার পাশেই রান্নাঘর। ওই নর্দমায় জল জমে থাকে। সোনুদের ভাড়াবাড়িতে একই চৌহদ্দিতে ছোট ঘরে গোটা ছ’য়েক পরিবার থাকে। শৌচাগারে গিয়ে দেখা গেল, তা ব্যবহারের অযোগ্য। বাসন্তীদেবী বলেন, ‘‘কোনও মানুষ এই শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে? শৌচাগার তৈরির জন্য বলেছি। কাজ হয়নি।’’ পান্নালালবাবু বলেন, ‘‘বাড়িওয়ালাকে অনেক বার বলা হয়েছে, শৌচাগার তৈরি করতে। না পারলে পুরসভায় যাতে যোগাযোগ করেন, সে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ওঁরা তা করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy