বেহাল: এমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পানীয় জলের ব্যবস্থা। অবশ্য সব কলই এখন খারাপ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
পুরনো চারটি ট্যাপকলের সংযোগ কাটা। নতুন করে দু’টি ট্যাপকল বসানো হলেও তা মাস চারেক ধরে বিকল। ফলে, আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড চত্বরে কারও তেষ্টা পেলে জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাসকর্মী থেকে যাত্রী, স্থানীয় ব্যবসায়ী— সকলেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। পরিস্থিতির জন্য পুরসভার উদাসীনতাকে দায়ী করছেন তাঁরা।
আরামবাগ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ওই বাসস্ট্যান্ড চত্বর ব্যস্ত এলাকা। বাসস্ট্যান্ডটি দেখভালের দায়িত্ব পুরসভার। বাস-মালিকরা জানান, হুগলির বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান, হাওড়া, কলকাতা এবং ঝাড়খণ্ডগামী বাস এখানে দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে ৩৫টি রুটের প্রায় চারশো বাস আরামবাগের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ছাত্রছাত্রী, অফিস যাত্রী-সহ প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
বাসস্ট্যান্ড চত্বরের হকার্স কর্নারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাম আমলে তাঁদের মাসিক ৬০ টাকা ভাড়া দিতে হত। বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ড একলাফে তা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা করেছে। অথচ, পরিষেবা ঠেকেছে তলানিতে। পানীয় জলের সঙ্কটের পাশাপাশি সমস্যা সাফাই নিয়েও। গোটা চত্বর অপরিষ্কার। ইতিউতি ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।
পুরসভা সূত্রের খবর, বাসস্ট্যান্ডের শৌচাগার চালানোর বরাত পেয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিবাকর মণ্ডল। অভিযোগ, তিনি পানীয় জলের লাইন কেটে দিয়েছেন। ফলে, ওই চত্বরের ব্যবসায়ীদের শৌচাগারের জন্য দেওয়া পুরসভার সংযোগ থেকে জল কিনতে হচ্ছে।
সঞ্জয় বাগ নামে একটি হোটেলের মালিকের অভিযোগ, ‘‘জলের দাম হিসেবে রোজ ২০ টাকা দিতে হচ্ছে।’’ বিমল রায় নামে এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, জলের জন্য কর নেওয়া যাবে না। অথচ পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ নেতাই এই ভাবে জল বেচছেন। পুরপ্রধানকে জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
বাস-মালিক সমিতির তরফে শান্তনু গুপ্ত বলেন, “বাসস্ট্যান্ড ব্যবহারের জন্য আমাদের রোজ ২০ টাকা করে দিতে হয় পুরসভাকে। কিন্তু কোনও পরিষেবা মিলছে না। পানীয় জল নেই। যত্রতত্র আবর্জনা। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গিয়ে গর্ত হয়ে গিয়েছে। সংস্কার করা হচ্ছে না।’’
বাসস্ট্যান্ডের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে স্থানীয় বাসিন্দা তথা শহর তৃণমূলের সম্পাদক চিন্ময় ঘোষ বলেন, “আমাদেরই দলের দিবাকর অন্যায় ভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে জল বেচছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। পুরসভায় বিষয়টি জানিয়ে এর বিহিত চাইব।”
টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে দিবাকরের দাবি, “পুরনো ট্যাপকলগুলি অধিকাংশ সময় খোলা থাকত অথবা খারাপ হয়ে জল অপচয় হচ্ছিল। তাই, শৌচালয়ে জল যাচ্ছিল না। সেই কারণেই ওই লাইন কেটে দিয়েছি। পুরপ্রধানকে জানিয়েই এটা করেছি।’’
পুরপ্রধান স্বপন নন্দী বলেন, “ওখানে পরিস্রুত পানীয় জলের যন্ত্র খারাপ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই মেরামত করা হবে। জলের সমস্যা মিটে যাবে।’’ পুরনো ট্যাপকলের সংযোগ কাটা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই কল থেকে জল অপচয় হচ্ছিল বলেই সম্ভবত দিবাকর সংযোগ কেটেছেন। তবে জলের জন্য টাকা নিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy