—ফাইল চিত্র।
হাওড়া পুরসভায় প্রতি বছর কোষাগারে ঘাটতি হচ্ছিল ৩০ কোটি টাকা। গত কয়েক মাসে রাজস্ব আদায় তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় এই ঘাটতি আরও বেড়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন পুরসভার পদস্থ অফিসারেরাই। যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সংশোধিত পেনশন, লিভ এনক্যাশমেন্ট-সহ সংশোধিত গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছ’টি গুরুত্বর্পূণ প্রকল্প-সহ শহরের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামতির কাজও। নির্বাচিত বোর্ড না থাকার পাশাপাশি কমিশনার পদে স্থায়ী কেউ না থাকায় হাওড়া পুরসভা কার্যত ‘অনাথ’। ফলে অর্থ সঙ্কটও চরমে উঠেছে।
দু’বছর ধরে হাওড়া পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ড নেই। গত তিন বছরে বদলি করা হয়েছে তিন পুর কমিশনারকে। গত নভেম্বরেই মাত্র ছ’মাসের মধ্যে আচমকা বদলি করে দেওয়া হয় পুর কমিশনার ধবল জৈনকে। তার পর থেকেই ওই পদে স্থায়ী কোনও কমিশনারকে পাঠানো হয়নি। বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই পদ সামলাচ্ছেন হাওড়ার জেলাশাসক।
পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরে যেখানে পুরসভার খরচ হয় ২০০ কোটি টাকারও বেশি, সেখানে গত কয়েক বছর ধরেই আয় ঘোরাফেরা করছে ১৬০-১৭০ কোটির মধ্যে। যার ফলে প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে। পুরসভার খরচের তালিকায় রয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, ১০০ দিনের মজুরির টাকা, দৈনন্দিন অত্যাবশ্যক পরিষেবা বজায়-সহ প্রশাসনিক ও অন্য খরচ। পুরসভার দেওয়া হিসেব অনুযায়ী স্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতেই বছরে ৩৯ কোটি টাকা লাগে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাবদ লাগে ৮ কোটি টাকা। জল সরবরাহ-সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যক পরিষেবা দিতে খরচ লাগে বছরে ৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রশাসনিক ও অন্যান্য খরচ চালাতে লাগে ২৫ কোটি টাকা।
পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, লাইসেন্স, সম্পত্তি কর, বিল্ডিং দফতর ও বিজ্ঞাপন থেকে মেরেকেটে বছরে আয় হয় ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের কোনও সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতি বছর
ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাই পুরসভার ভাঁড়ারও ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর উপরে কোভিড ও আমপান ঝড়ের দাপটে পুর কোষাগার কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার আর টাকা নেই। একেবারে গোলমেলে অবস্থা। যার ফলে বর্ষা কেটে যাওয়ার পরে টেন্ডার হয়েও রাস্তা মেরামতির কাজ হয়নি। পুরনো ছ’টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি অফিসার ও কর্মীদের লিভ এনক্যাশমেন্ট বাবদ কয়েক কোটি টাকা গত জুলাই মাস থেকে পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, এর জেরে অফিসার-কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহও কমে গিয়েছে। মনোবলও তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে।’’
পুরসভার অফিসার ও কর্মীদের বক্তব্য, যে ভাবে বারবার পুর কমিশনার বদল করে ছেলেখেলা করা হচ্ছে তাতে যে কোনও দিন পুর পরিষেবা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে। অভিযোগ, এর মধ্যে কর্মীরাও ঠিক মতো কাজ না করায় শহরে ভ্যাট উপচে পড়ছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় নিকাশি নালাগুলিতে পাঁক জমে রয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করাও দায় হয়ে উঠেছে।
এই বেহাল দশা নিয়ে পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার অর্থ সমস্যা রয়েছে ঠিকই কিন্তু পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অবহেলা করা হচ্ছে না। পুজোর মরশুমে কর্মীরা ছুটিতে থাকায় প্রতি বছর আবর্জনা, নিকাশি নালা পরিষ্কারে একটু সমস্যা হয়। ও সব কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy