বেনিয়ম: লোহার কাঠামো বেঁধে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে। ছবি: তাপস ঘোষ
রাত পোহালেই নতুন বছর। লোহার কাঠামো ঘেরা মঞ্চ মাথা তুলেছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে, জোড়াঘাটের সামনে। সেখানে বর্ষ শেষ আর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে আজ। কিন্তু নিয়ম কি মানা হচ্ছে?
পরিবেশবিদদের দাবি, না। পরিবেশ বিধি না-মেনেই কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যের স্ট্র্যান্ডে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি সংস্থা। অথচ, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে, গঙ্গা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। রাত দশটার পর মাইক বাজানোও যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ উপেক্ষিত হয়। অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। মানা হয় না শব্দবিধিও। ওই অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের একাংশেরও। স্ট্র্যান্ড সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘অনেক রাত পর্যন্ত জোরে মাইক বাজে। এ বারও নিশ্চয় তাই হবে।’’ সকাল-বিকেল যাঁরা স্ট্র্যান্ডে হাঁটতে আসেন, তাঁদেরও কেউ কেউ এমন আয়োজনে ক্ষুব্ধ। এতে স্ট্র্যান্ডের ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আয়োজক সংস্থা অবশ্য দাবি করেছে, তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের অনুমতি রয়েছে। সংস্থার পক্ষে পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ৮ বছর ধরে অনুষ্ঠান করছি। পুলিশ, পুরসভা, মহকুমাশাসক এবং দমকলেরও অনুমতি রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অনুষ্ঠান। বিধি
মেনেই করছি।’’
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা। কী ভাবে স্ট্র্যান্ডে অনুষ্ঠানের অনুমতি পায় সংস্থা? পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, স্ট্র্যান্ডে কী করা যাবে আর কী যাবে না, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ না-থাকার সুযোগেই এ জাতীয় অনুষ্ঠান হয়ে চলেছে। ওই আয়োজনের প্রতিবাদে নেমেছে ‘চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ এবং ‘প্রবীণ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’। দুই সংস্থার পক্ষ থেকে আজ, মঙ্গলবার চন্দননগর থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ শহরের বাসিন্দা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আগাম পুরসভা এবং পুলিশকে জানিয়েছিলাম ওই বিষয়ে। নিয়ম ভেঙে নানা সংস্থা স্ট্র্যান্ডে অনুষ্ঠান করছে। প্রশাসনের অনুমতি এইসব সংস্থা পায় কী করে?’’
এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না মিললেও চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষজনের তরফে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। স্ট্র্যান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আচরণবিধি তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে আমারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে সব বন্ধ করে দেব। স্ট্র্যান্ড হেরিটেজ সাইট। তাই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।’’
অবশ্য শুধু ওই অনুষ্ঠানকে ঘিরেই নয়, বছরভর স্ট্র্যান্ডে যে ভাবে অনুষ্ঠানের বহর বাড়ছে, তাতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের অভিযোগ, গঙ্গা সংলগ্ন ওই এলাকায় পরিবেশ সংক্রান্ত নানা নির্দেশ মেনে চলার কথা। অনুষ্ঠানের চাপে সেই নিয়ম শিকেয় ওঠে। পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, চন্দননগর থানা, পুরসভা, মহকুমাশাসকের অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে কী ভাবে এই অব্যবস্থা চলতে পারে? গঙ্গা এবং ইতিহাস প্রসিদ্ধ ওই এলাকাকে দূষণমুক্ত রাখা জরুরি। পরিবেশ কর্মীদের দাবি, স্ট্র্যান্ড সংলগ্ন পুরসভা, ফরাসি জাদুঘর, আদালত, গির্জা, মহকুমাশাসকের দফতর-সহ পুরো এলাকাকে ‘প্লাস্টিক বর্জিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ওই এলাকাকে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দিষ্ট আচরণবিধি তৈরি করা হোক। যানবাহন নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ ব্যবস্থা নিক।
স্ট্র্যান্ডে নিয়মিত হাঁটতে আসেন পরিবেশ কর্মী কৃষ্ণেন্দু বসু। তিনি বলেন, ‘‘স্ট্র্যান্ড এ শহরের গৌরব, ঐতিহ্য। নিয়মিত বহু বিদেশি আসেন। কিন্তু স্ট্র্যান্ডের রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। স্ল্যাব ভেঙে যাচ্ছে। গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। বসার বেঞ্চ ভেঙে যাচ্ছে। বয়স্করা পড়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি পুরসভার দেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy