Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
রসপুর পিপলস লাইব্রেরি

বই কিনতে ১০ টাকা মানি অর্ডার করেন নেহরু

সালটা ১৯৪২। জুন মাসের শেষ দিন। হাওড়ার আমতার রসপুর পিপলস লাইব্রেরিতে এসে পৌঁছল একটি চিঠি। প্রেরকের ঠিকানা আনন্দভবন, দিল্লি। প্রেরক স্বয়ং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। পরবর্তীকালে যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

নেহরুর সেই চিঠি

নেহরুর সেই চিঠি

নুরুল আবসার
আমতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

সালটা ১৯৪২। জুন মাসের শেষ দিন।

হাওড়ার আমতার রসপুর পিপলস লাইব্রেরিতে এসে পৌঁছল একটি চিঠি। প্রেরকের ঠিকানা আনন্দভবন, দিল্লি। প্রেরক স্বয়ং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। পরবর্তীকালে যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

কী ছিল সেই চিঠিতে?

রসপুর পিপলস লাইব্রেরির তৎকালীন সম্পাদক এম খান-কে পণ্ডিত নেহরু লিখছেন, ‘গত ১৭ জুন আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার লাইব্রেরির জন্য আমি ১০টাকা মানিঅর্ডার করে পাঠালাম। যাতে আপনি আমার আত্মজীবনী গ্রন্থের বাংলা অনুবাদটি বা অন্য কোনও বই কিনতে পারেন। আপনার লাইব্রেরির সাফল্য কামনা করি’।

কিন্তু নেহরুর কাছে কী বিষয়ে চিঠি লিখেছিলেন এম খান!

নেহরুর কাছে একটি চিঠি লিখে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁর লেখা আত্মজীবনীর একটি কপি যেন তিনি এই লাইব্রেরিতে পাঠান। সুদূর পশ্চিমবঙ্গের এক জেলার একটি লাইব্রেরির এমন আবেদনে সাড়া দিয়েই পণ্ডিতজীর ওই চিঠি। টাইপ করা চিঠি। নীচে তাঁর সাক্ষর। চিঠির মাথায় ডান দিকে লেখা তারিখ ২৩ জুন। সাল ১৯৪২। লাইব্রেরির সম্পাদকের চিঠির জবাবে নেহরু জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে বইটি আপাতত নেই। তবে মানি অর্ডার করে ১০ টাকা তিনি পাঠাচ্ছেন। তা দিয়ে যেন তাঁর লেখা ওই বইটি, অথবা অন্য কোনও বই কিনে নেন গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ।\

নেহরুর আত্মজীবনীর বাংলা অনুবাদ।—নিজস্ব চিত্র।

নেহরুর সেই চিঠি অমূল্য সংগ্রহ হিসাবে আজও সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে গ্রন্থাগারে। নেহরু ‘স্মৃতিধন্য’ এই গ্রন্থাগার নিয়ে গর্ব রয়েছে গ্রামবাসীদেরও। রসপুর পিপলস লাইব্রেরি হাওড়া জেলার প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলির অন্যতম। নথি থেকে জানা যায়, গ্রামবাসীরাই উদ্যোগী হয়ে ১৮৮৩ সালে গড়ে তুলেছিলেন এই গ্রন্থাগার। পরবর্তীকালে এটি সরকারি গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। সরকার এখানে একজন গ্রন্থাগারিক এবং একজন গ্রন্থাগারকর্মী নিয়োগ করে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬০০। সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও এখানে এসে পড়াশোনা করেন।

লাইব্রেরির এমন ইতিহাস থাকলেও বছর তিনেক ধরে বেহাল অবস্থায়। প্রধান সমস্যা গ্রন্থাগারিক না থাকা। বছর তিনেক আগে গ্রন্থাগারিক অবসর নেন। তারপর আর নিয়োগ হয়নি। উল্টে গ্রন্থাগারকর্মী যিনি ছিলেন তাঁকেও তুলে নেওয়া হয়েছে আমতা পাবলিক লাইব্রেরির জন্য। কর্মীর অভাবে সপ্তাহে মাত্র দু’দিন খোলে গ্রন্থাগার। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে গ্রাহকদের।

গ্রামবাসীদের দাবি, পাঠক ও ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে প্রতিদিন যাতে গ্রন্থাগার খোলা থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা গ্রন্থাগার বিভাগ সূত্রে খবর, হাওড়ায় বহু গ্রন্থাগারেই এমন অবস্থা। কর্মীর অভাবের জন্য রসপুর পিপলস লাইব্রেরির গ্রন্থাগার কর্মীকে আমতা পাবলিক লাইব্রেরির কাজও দেখতে বলা হয়েছে। যদিও কবে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা মিটবে সে বিষয়ে গ্রন্থাগার বিভাগ কিছু জানাতে পারেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

money order
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy