হাওড়ার অভিজাত ক্লাবের সুইমিং পুলে রহস্যজনক ভাবে মৃত শুভাঞ্জিতা বসাক রবিবার জলে নেমেছিলেন সাঁতার-পোশাক ছাড়াই। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। অথচ, ক্লাব-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই পুলিশ জেনেছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ দিন হোক বা পুল-পার্টি জাতীয় অনুষ্ঠান, সাঁতার-পোশাক ছাড়া পুলে নামা নিষিদ্ধ। সেটা তাঁরা পার্টির আয়োজকদের জানিয়েছিলেন বলেও দাবি ক্লাব-কর্তাদের। তা সত্ত্বেও রবিবার সেই পুলে ২৫ বছরের ওই তরুণীকে কী ভাবে নামতে দেওয়া হল, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বিশেষত, যেখানে ওই পার্টির আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা জনা পঁচিশেক বাউন্সার রেখেছিলেন।
পুলিশ জানায়, এই ধরনের বহু অভিজাত ক্লাব বা রিসর্টের পুলে সুইমিং কস্টিউম ছাড়া নামার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমনকী, নাবালকদেরও এর আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয় না। কস্টিউম আনেননি অথচ পুলে নামতে ইচ্ছুক, এমন কেউ ক্লাব থেকে সাঁতার-পোশাক কিনে তবেই জলে নামতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাধারণ পোশাকে জলে নামাটা আদৌ নিরাপদ নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে পোশাক ভিজে ভারী হয়ে যাওয়ায় অনেক সময়েই জল থেকে ওঠা কষ্টকর হয় এবং যে কোনও মুহূর্তে বিপদের আশঙ্কা থাকে।
গড়িয়ার শ্রীরামপুর রোডের একটি বাড়িতে কয়েক মাস ধরে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকছিলেন শুভাঞ্জিতা। সেখানকার রুমমেট প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্যের সঙ্গেই রবিবার ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’-র পার্টিতে যোগ দিতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। প্রিয়াঙ্কা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দু’য়েক আগে শুভাঞ্জিতা তাঁকে বলেছিলেন, তিনি ওই পার্টিতে গিয়ে পুলে সাঁতার কাটতে চান। কিন্তু রবিবার সঙ্গে কোনও কস্টিউম নিয়ে যাননি তিনি। পার্টি চলাকালীন দু’বার তিনি শুভাঞ্জিতাকে দেখতে পেয়েছিলেন বলে প্রিয়াঙ্কা পুলিশকে জানিয়েছেন। দু’বারই ওই তরুণী পুলের ধারে একটি চেয়ারে বসেছিলেন। তার পরেও বাউন্সারদের নজর এড়িয়ে শুভাঞ্জিতা কী ভাবে জলে নামলেন, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের দাবি, শুভাঞ্জিতার নিথর দেহ যখন পুল থেকে উদ্ধার হয়, তখন তাঁর পরনে ছিল পার্টি-ড্রেস। শুভাঞ্জিতা একা নন, কস্টিউম ছাড়া ওই দিন পুলে নেমেছিলেন বহু নারী-পুরুষই। সব মিলিয়ে, জলে পার্টির আয়োজন করতে হলে নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক যে সব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তাতে বিস্তর গাফিলতি ছিল বলে তদন্তে এগিয়ে বেশি করে বুঝতে পারছে পুলিশ।
তবে তদন্তকারীদের বক্তব্য, ক্লাবের সুইমিং পুলকে কেন্দ্র করে পার্টি হলেও তার নিরাপত্তার যাবতীয় দায়ভার নিয়েছিল আয়োজক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাই। পুলিশ জানিয়েছে, পার্টির জন্য দেড় লক্ষ টাকায় পুল ভাড়া দেওয়ার সময়ে ক্লাব-কর্তৃপক্ষ ওই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাটিকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পার্টি চলাকালীন নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁরা দেখবেন না। তবে ক্লাব-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পার্টির জন্য ওই পুল ভাড়া দেওয়া আপাতত বন্ধ থাকবে।
যদিও ঘটনার দু’দিন পরে ক্লাব-সদস্য বা তাঁদের পরিবারের কেউ সাঁতার কাটতেও ওই পুলে নামছেন না। হাওড়ার ওই অভিজাত ক্লাবের সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি। সদস্যদের অনেকেই গরমের সময়ে সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত ওই পুলে সাঁতার কাটতে যান। কিন্তু এই ঘটনার পরে সোম-মঙ্গলবার কেউই আসেননি। ক্লাবের কয়েক জন কর্মীর বক্তব্য, পুলে ডুবে মৃত্যুর এই খবর পেয়ে অনেকেই ভয় পেয়ে আসছেন না।
ক্লাব-কর্তৃপক্ষ জানান, সদস্যদের অনেকে ফোন করে ক্লাবের অবস্থার কথা জানতে চেয়েছেন। এই সব কারণে ওই সুইমিং পুলটিই কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, পুলটি পরিষ্কার করা এবং জল পাল্টানো ছাড়াও অন্যান্য খুঁটিনাটি কিছু কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। সোমবার দুপুরেও ওই পুলে বিয়ারের ক্যান ও মদের বোতল ভাসতে দেখা গিয়েছিল।
ওই তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ অবশ্য এখনও কোনও প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পায়নি। তাই কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি পুলিশের কাছে। এই অবস্থায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাউন্সাররাই এখন তদন্তকারীদের ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy