প্রতীকী চিত্র।
মধ্যরাতে মায়ের পাশ থেকে ঘুমন্ত সদ্যোজাতকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। মর্মান্তিক ওই ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে এক পক্ষকাল। এখনও ১৫ দিনের ওই শিশুর মৃত্যু-রহস্যের জট ছাড়াতে পারল না পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২৪ অগস্ট শ্যামপুরে মরশাল গ্রামের তেঁতুলতলায়। সে রাতে ১৫ দিনের আরাধ্যা মাঝিকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন তার মা সোনিয়া। পাশে শুয়েছিলেন স্বামী সায়ক। বাড়িতে ছিলেন তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়ি। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে পাশে মেয়েকে দেখতে না-পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন সোনিয়া। ভোর হলে দেখা যায়, বাড়ির পাশের পুকুরের পাড়ে পড়ে রয়েছে শিশুকন্যার নিথর দেহ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাড়িতে ঢোকার মূল দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাতেই ধন্দ বাড়ে পুলিশের। ঘটনায় পরিবারের কারও হাত রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সকলকে একাধিক বার জেরা করার পরেও রহস্যভেদ হয়নি। ফলে, এলাকায় অসন্তোষ ছড়িয়েছে। শিশুহত্যার কিনারার দাবিতে সম্প্রতি শ্যামপুর-উলুবেড়িয়া রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা।
মৃত শিশুর মা বলেন, ‘‘রাতে মেয়েকে নিয়ে শুয়েছিলাম। রাত ৩টে নাগাদ দেখি, মেয়ে পাশে নেই। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। পরে বাড়ির কাছেই পুকুর থেকে মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়।’’ ঘটনার দু’দিন পরে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও তাতে সন্দেহভাজন হিসাবে কারও নামের উল্লেখ ছিল না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ শাসকদলের নেতাদের চাপে দোষীকে ধরছে না। কারণ, মৃত শিশুটির পরিবারের সদস্যেরা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। তাই পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা সায়কের আত্মীয় অরূপ মাঝি বলেন, ‘‘দোযীকে খুঁজে বার করার কথা বারবার বলা হয়েছে পুলিশকে। সব ধরনের সহযোগিতাও পুলিশকে করা হচ্ছে। এখানে কেউ শাসকদলের কর্মী হলেও ছাড় পাবে না। আসল দোষীকে খুঁজে বার করুক পুলিশ। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’’
আরাধ্যার বাবা সায়কের বক্তব্য, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। ভোটের সময় যাকে ভাল মনে হয়, তাকে ভোট দিই।’’ শিশু-হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না, কে আমার মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলে দিল। কেউ আগে থেকেই ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসেছিল কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না। হয়ত আমাদের ফাঁসানোর জন্য এই কাজ করেছে।’’ কিন্তু বাড়ির দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ ছিল? সায়কের মতে, ‘‘হয়ত কেউ ফাঁসানোর জন্য গেটের বাইরে থেকে হাত ঢুকিয়ে তালা দিয়ে টেবিলে চাবি ছুড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছে।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যতবার তদন্তের জন্য ডাকবে, ততবার যাব। আমিও চাই দোষীর
শাস্তি হোক।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সদস্য চার জন। রাতে বাড়িতে ঢোকার মূল দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। দিনের আলোর মতোই পরিস্কার যে, ওই চার জন ছাড়া কেউ এই কাজ করতে পারে না। পুলিশ চারজনকে এক সঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। লোক দেখাতে মাঝেমধ্যে পরিবারের এক জনকে থানায় ডেকে পাঠাচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ
পরে ছেড়ে দিচ্ছে।’’
পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। এসডিপিও (উলুবেড়িয়া) অনিমেষ রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর। তাই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই দোষীকে গ্রেফতার করা হবে।’’ হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের আর এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের থেকেও অনেক কিছু জানা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy