Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বকেয়া কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটাতে কোপ উন্নয়নে

সময়ে মেটানো হয়নি বিদ্যুৎ বিল। প্রায় দেড় বছর ধরে তারকেশ্বর পুরসভার সেই বিলের অঙ্ক বেড়ে হয়েছিল এক কোটি টাকারও বেশি! বিল মেটাবে কে? পুরসভার ভাঁড়ার যে প্রায় শূন্য! অগত্যা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তারকেশ্বর পুরসভার এলাকা উন্নয়নের খাতের বরাদ্দে কোপ দিয়ে সেই বিল মেটাল সম্প্রতি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৭:৩০
Share: Save:

সময়ে মেটানো হয়নি বিদ্যুৎ বিল। প্রায় দেড় বছর ধরে তারকেশ্বর পুরসভার সেই বিলের অঙ্ক বেড়ে হয়েছিল এক কোটি টাকারও বেশি! বিল মেটাবে কে? পুরসভার ভাঁড়ার যে প্রায় শূন্য! অগত্যা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তারকেশ্বর পুরসভার এলাকা উন্নয়নের খাতের বরাদ্দে কোপ দিয়ে সেই বিল মেটাল সম্প্রতি। পুর কর্তৃপক্ষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুরসভার অন্দরেই। এ জন্য পুর এলাকার উন্নয়ন ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। আর বিরোধীরা অভিযোগ করছে, পুর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই হাল হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ এবং পুর এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত। তাঁর দাবি, ‘‘সাময়িক একটা সমস্যা হয়েছে সেটা বাস্তব। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বাম আমল থেকেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের অনেক টাকা বকেয়া ছিল। কিন্তু আমরা তা শীঘ্রই কাটিয়ে উঠব। উন্নয়নের প্রশ্নে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

কিন্তু অত টাকা বিদ্যুৎ বিল জমল কেন?

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসে তাদের বিদ্যুৎ বিল সাধারণ ভাবে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। পানীয় জল সরবরাহের জন্য পুরসভার নিজস্ব ১১টি পাম্প রয়েছে। সেই খাতে মোটা টাকা বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয়। এ ছাড়াও এলাকার পথবাতি, পুরসভার অতিথিশালা, পুরসভার নিজস্ব ভবনের জন্যও প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। তারকেশ্বর মন্দিরের পুণ্যার্থীদের গাড়ির পার্কিং এলাকা এবং অফিসের জন্যও বিদ্যুৎ খাতে খরচ যথেষ্ট। রয়েছে আরও কিছু খাত।

পুর কর্তৃপক্ষের একাংশ মেনে নিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই পুরসভায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। ফলে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থেকে গিয়েছে। পুরসভা সমস্যায় পড়লে অনেক সময় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে বোঝাপড়া করে কিস্তিতে বিদ্যুৎ বিল মেটানো হয়। কিন্তু ভাঁড়ারে টাকা কম থাকায় এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে, বকেয়ার অঙ্ক লাফিয়ে বেড়ে পৌঁছে যায় ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকায়। সেই বিশাল বকেয়া মেটাতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তাগাদাও দিয়েছিল। না-পাওয়ায় তারা নিয়ম মতো পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে জানায়। ওই দফতর পুরসভার উন্নয়ন খাত থেকে সেই টাকা কেটে বিদ্যুৎ বিল মেটায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, বিরোধীরাও প্রশ্ন তুলছেন, এর আগেও তো পুরসভার বিদ্যুৎ বিলের টাকা সময়ে মেটানো হয়নি। কিন্তু এই অবস্থা তো হয়নি! কী এমন ঘটল, যে সেই টাকা ইদানীং আর দিতে পারছিলেন না পুর কর্তৃপক্ষ?

এলাকার সিপিএম নেতা মুকুল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাবেই পুরসভার আয় বাড়ছে না। কর আদায়েও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জমি-বাড়ির অ্যাসেসমেন্ট করে কর নির্ধারণের কাজ আমাদের আমলেই শেষবার (২০০৩ সাল) হয়েছিল। তার পরে আর হয়নি। কাজেই পুরসভার যে নুন আনতে পান্তা ফুরোবে, তা তো জানা কথাই।’’

পুর কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ মেনে নিয়েছেন, গত কয়েক বছরে আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতি বেড়েছে। পুরসভার কাজের প্রয়োজন এবং আর্থিক সঙ্গতির তোয়াক্কা না করে চুক্তিতে একের পর এক নিয়োগ হয়েছে। গত পুরবোর্ডে ৪০ জন কর্মী চুক্তির ভিত্তিতে ছিলেন। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে হয়েছে ১১০। তাঁদের বেতন পুরসভাকেই বহন করতে হয়। এমন অসঙ্গতি আরও রয়েছে। চেয়ারম্যান স্বপনবাবু অবশ্য এ সব কথা মানছেন না। তাঁর দাবি, লোক নিয়োগ যথাযথ ভাবেই হয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল তা মেটানো হয়েছে।

এখন দেখার এলাকা উন্নয়নে টাকার জোগান যথাযথ থাকে কি না!

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Phone bill Development sector
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy