ভরসন্ধ্যায় ভরা স্টেশনে ফুটফুটে একটি শিশু কোলে এ দিক ও দিক ঘোরাঘুরি করছেন এক মহিলা। কোলে থাকা শিশুকন্যাটি সমানে চিল-চিৎকার করে চলেছে। কেউ কৌতূহলবশে মহিলাকে প্রশ্ন করলে তিনি সমানে বলে চলেছেন, অন্য এক মহিলা ট্রেনে উঠে নিজের শিশুকন্যাটিকে ধরতে তাঁর কোলে দিয়েছিলেন। পরে হঠাৎই তিনি ট্রেন থেকে কোথায় নেমে গেলেন বুঝতে পারছেন না। রবিবার সন্ধ্যায় এমন ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় ভদ্রেশ্বর স্টেশনে। অনেকে মহিলাকে শিশু পাচারকারীও ভেবে বসেন।
শেষমেশ বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। জিআরপি ওই মহিলাকে বাচ্চা সমেত নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিকে মেয়ের খোঁজ করতে করতে রাতেই জিআরপি থানায় পৌঁছন শিশুটির বাবা-মা। সোমবার শিশুটিকে বাবা-মা’র হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মা মৌসুমীদেবী জানান, শেওড়াফুলি থেকে ভিড় ট্রেনে মেয়েকে নিয়ে ওঠার পর হাতে মালপত্র থাকায় তিনি ওই স্টেশন থেকেই ওঠা আর এক মহিলাকে মেয়েকে ধরতে বলেন। কিন্তু বৈদ্যবাটি স্টেশনে তিনি ভুল বোঝাবুঝির জেরে মেয়েকে ফেলে ট্রেন থেকে নেমে যান। রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রতবাবু দিনমজুর। বৈদ্যবাটির চক গোয়ালাপাড়ায় ভাড়া থাকেন। মৌসুমীদেবী এক বছরের মেয়েকে নিয়ে শেওড়াফুলিতে বাপের বাড়ি এসেছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শেওড়াফুলি স্টেশন থেকে আপ ব্যান্ডেল লোকালে ওঠেন। ট্রেনে বেশ ভিড় ছিল। মেয়ে ছাড়াও মৌসুমীদেবীর হাতে দু’টি ব্যাগ ছিল। ওঠার সময় তিনি বাচ্চাটিকে এক মহিলার হাতে দেন। পরের স্টেশন বৈদ্যবাটিতে তিনি নেমে পড়েন। রেল পুলিশকে মৌসুমিদেবী জানান, তিনি ভেবেছিলেন ওই মহিলাও বৈদ্যবাটিতেই নামবেন। প্ল্যাটফর্মে নেমে তিনি মেয়েকে নিয়ে নেবেন।
রূপা ঘোষ নামে ওই মহিলা অবশ্য ভদ্রেশ্বর লাইন পাড়ে থাকেন। তিনি ভদ্রেশ্বর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামেন। কিন্তু বাচ্চাটির মাকে দেখতে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। ইতিমধ্যেই অন্য যাত্রীরা তাঁকে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকেন। তার উপর বাচ্চাটি ক্রমাগত কেঁদে চলায় মহিলা রীতিমতো ঘাবড়ে যান। লোকজনও তাঁকে সন্দেহ করে স্টেশন মাস্টারের ঘরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে জিআরপি শিশু-সহ ওই মহিলাকে শেওড়াফুলি জিআরপি থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে খবর দেওয়া হয় চাইল্ড লাইনে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাচ্চাটিকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে তাকে চাইল্ড লাইনের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাতে শিশুটিকে কোন্নগরের একটি হোমে রাখা হয়। শিশুটির ব্যাপারে বিভিন্ন স্টেশনে খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। খবর ছড়াতে সোস্যাল মিডিয়াতেও ‘শিশু নিখোঁজ’ সংক্রান্ত পোস্ট করতে থাকেন অনেকে।
রাতেই মেয়ের খোঁজে শেওড়াফুলি জিআরপি-তে আসেন সুব্রত-মৌসুমী। রেল পুলিশকে মৌসুমিদেবী জানান, বৈদ্যবাটিতে নেমে ওই মহিলাকে দেখতে না পেয়ে তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান। স্বামী বাড়িতে ফিরলে সব খুলে বলেন। তার পরে দু’জনে বৈদ্যবাটি স্টেশন হয়ে শেওড়াফুলি জিআরপি থানায় এসেছেন। ততক্ষণে অবশ্য বাচ্চাটিকে হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতেই ওই দম্পতি ওই হোমে যান। তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে সোমবার বাচ্চাটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রেল পুলিশের এক অফিসার জানান, রূপাদেবীকে অকারণেই কিছুটা হয়রানি পোহাতে হয়। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বাচ্চাটিকে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তিনিও হাসপাতালে যান। হোমে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বাচ্চাটিকে যত্নের সঙ্গে আগলে রেখেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy