ফাইল চিত্র।
সচেতনতা ফিরছে না কিছুতেই।
এটিএম কার্ডের কোনও তথ্য যাতে কাউকে জানানো না হয়, সে ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। প্রচার চালায় পুলিশও। তার পরেও এক শ্রেণির মানুষ ভুয়ো ফোনে বিভ্রান্ত হয়ে সব তথ্য জানিয়ে দেন। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হয়ে যায় টাকা। সাধারণ মানুষ যাতে এ ভাবে ‘সাইবার ক্রাইম’-এর শিকার না হন, সে জন্য এ বার ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার উপরে জোর দিচ্ছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা। কিন্তু তার মধ্যেও শনিবার শ্রীরামপুরের এক দম্পতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়েছে। টাকা ফেরত পেতে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পার্থ এবং চন্দনা ঘোষ নামে ওই দম্পতি শ্রীরামপুরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শ্রীরামপুর শাখায় তাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। শনিবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ চন্দনাদেবীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কথা বলছেন। জানানো হয়, তাঁদের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তা যাতে না হয়, সে জন্য দ্রুত তাঁদের ডেবিট কার্ডের নম্বর দিতে হবে। না হলে অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হবে। এর পরে চন্দনাদেবী ওই কার্ডের সমস্ত তথ্যই জানিয়ে দেন। মোবাইলে আসা ‘ওটিপি’ নম্বরও বলে দেন। কিছুক্ষণ পরেই ফোনে আসা মেসেজে চন্দনা বুঝতে পারেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্ট থেকে কয়েক খেপে ৯৫ হাজার ১৭১ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
চন্দননদর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুযায়ী খোওয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই জাতীয় তথ্য ব্যাঙ্কের তরফে কখনওই ফোন করে জানতে চাওয়া হয় না। কিন্তু অনেকেই এই ভুল করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা এটিএম কার্ডের গোপন তথ্য জানিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রেও এটিএম কার্ডের তথ্যের পাশাপাশি একাধিক বার মোবাইল ফোনে আসা মেসেজ পর্যন্ত বলে দেওয়া হয়। প্রতারকরা সেই সুযোগে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’’
সাইবার অপরাধ মোকাবিলার জন্য এগারো মাস আগে কমিশনারেটে ‘সাইবার সেল’ চালু হয়েছে। কিন্তু পুলিশ জোর দিচ্ছে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে। কমিশনারেটের ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘মানুষ প্রতারিত হলে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা পুলিশ অবশ্যই করবে। তবে মানুষ সচেতন হলে এই দুষ্কর্ম ঘটবেই না।’’
গত জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি অভিযোগ এসেছে সাইবার সেলে। আধিকারিকদের দাবি, মোট অভিযোগের প্রায় ৪০% ক্ষেত্রে টাকা প্রতারিত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। অঙ্কের হিসেবে তা ৩২ লক্ষেরও বেশি টাকা। পুলিশের বক্তব্য, দুষ্কৃতী চক্র গোটা ‘অপারেশন’ চালায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তারা পর পর বেশ কয়েকটি ওয়ালেটে টাকা সরাতে থাকে, যাতে পুলিশ লেনদেন বন্ধ করার আগেই ওই টাকা ‘হজম’ করে ফেলা যায়।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাতিয়ে দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন ভাবে তা ব্যবহার করতে পারে। বহুজাতিক সংস্থা থেকে কেনাকাটা, কিছুর বিল জমা দেওয়া, ই-গোল্ড কেনা— সবই করা যায়। আমাদের কাজ হল দ্রুত লেনদেন বন্ধ করা। কোনও সংস্থায় জিনিস অর্ডার করা হলে তা যাতে সরবরাহ না হয়, তা নিশ্চিত করা। চক্রের কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গেলে সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’’ তাঁর সংযোজন, মানুষের উচিত টাকা তুলে নেওয়ার পরে দ্রুত স্থানীয় থানায় এবং সাইবার শাখায় বিষয়টি জানানো।
তদন্তকারীদের দাবি, গুরুগ্রাম, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ— প্রভৃতি জায়গা থেকে ফোন করে এই কাণ্ড করা হয়। তবে গোটা চক্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে নাইজেরিয়া বা রোমানিয়ার লোকজনের হাতে। তাঁরাই চক্রের ‘মাস্টার মাইন্ড’। এই কাজে ভারতীয়দের তারা ব্যবহার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy