Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ডালসা-র হাত ধরে দু’বছর পরে বাড়ি ফিরলেন যুবতী

দু’টি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্দনার কেটেছে ওড়িশার হোমে। দু’রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সৌজন্যে বৃহস্পতিবার খানাকুলের অরুন্ডা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরলেন বন্দনা। এত দিন পরে গ্রামে ফিরে তাঁর মনের আনন্দ পড়ে ফেলা যাচ্ছিল মুখের হাসিতেই।

ফেরার আনন্দে: ছেলেকে কোলে নিয়ে বন্দনা। পাশে মা। —নিজস্ব িচত্র

ফেরার আনন্দে: ছেলেকে কোলে নিয়ে বন্দনা। পাশে মা। —নিজস্ব িচত্র

প্রকাশ পাল 
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

দু’বছর পরে বৃহস্পতিবার নিজের গ্রামের মেঠো পথে পা রাখলেন বন্দনা। ছেলেকে কোলে নিলেন। মায়ের আদরও পেলেন।

দু’টি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্দনার কেটেছে ওড়িশার হোমে। দু’রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সৌজন্যে বৃহস্পতিবার খানাকুলের অরুন্ডা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরলেন বন্দনা। এত দিন পরে গ্রামে ফিরে তাঁর মনের আনন্দ পড়ে ফেলা যাচ্ছিল মুখের হাসিতেই।

বন্দনা পণ্ডিত নামে বছর আঠাশের ওই যুবতীর বছর দশেক আগে বিয়ে হয়। একমাত্র ছেলে সায়নের বয়স আট বছর। পরিবারের লোকেরা জানান, বছর কয়েক আগে বন্দনার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু মানসিক সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন। বছর দু’য়েক আগে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। কোনও ভাবে ওড়িশায় চলে যান। ওই রাজ্যের কোরাপুটে ‘মিশনারিজ় অব চ্যারিটি’-এর একটি হোমে তাঁর ঠাঁই হয়। কিন্তু পরিচয় জানাতে পারেননি। হোমে চিকিৎসায় তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

গত ১০ অক্টোবর ‘বিশ্ব মানসিক প্রতিবন্ধকতা দিবস’ উপলক্ষে কোরাপুট জেলার আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) সচিব ললিতা মঞ্জরী পট্টনায়েক ওই হোমে গিয়ে বন্দনার কথা জানতে পারেন। বন্দনা তাঁর কাছে সব খুলে বলেন। নিজের পরিচয়, আত্মীয়স্বজন, গ্রামের কথা— সবই কাগজে লিখে দেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ওই যুবতী। এর পরেই ললিতাদেবী যোগাযোগ করেন হুগলি ডালসা-র সচিব অনির্বাণ রায়ের সঙ্গে। ডালসা-র তরফে অরুন্ডা গ্রামে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বন্দনার দেওয়া তথ্য সঠিক। তখন মোবাইলে ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে ছেলে সায়ন এবং মা পদ্মাদেবীর সঙ্গে তাঁর কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। মোবাইলের পর্দায় পরস্পরকে দেখে তাঁরা চিনতে পারেন। এর পরেই ওই যুবতীকে দ্রুত বাড়ি ফেরানোর সরকারি প্রক্রিয়া চালু হয়।

পদ্মাদেবী, সায়ন, বন্দনার মামা অষ্টপদ মণ্ডল এবং কার্তিকচন্দ্র সাঁতরা নামে এক গ্রামবাসীকে নিয়ে গত রবিবার কোরাপুটে যান হুগলি ডালসা-র প্যারালিগাল ভলান্টিয়ার জোয়ালাপ্রসাদ মাহাতো। ট্রেনে চেপে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা হুগলিতে আসেন বন্দনাকে নিয়ে। শ্রীরামপুরে ডালসা-র কার্যালয়ে বন্দনার সঙ্গে কথা বলেন অনির্বাণবাবু।

একগাল হেসে বন্দনা বলেন, ‘‘ভিডিয়োতে মা-ছেলেকে দেখেই কখন যাই কখন যাই মনে হচ্ছিল। এখন ছেলেকে মানুষ করব। কী ভাবে ওখানে চলে গিয়েছিলাম, বলতে পারব না। হোমে রোজ আমাকে ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হত। ওঁরা খুব ভাল।’’ পদ্মাদেবী জানান, মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা কার্যত ছেড়েই দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে ফিরে আসায় স্বস্তি পেলাম। আমার কাছেই ও থাকবে।’’

বন্দনার ছেলের মানসিক সমস্যা রয়েছে। অনির্বাণবাবু জানান, প্রয়োজনে ডালসা-র তরফে

নিখরচায় বন্দনা এবং তাঁর ছেলের চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। খানাকুলে রওনা হওয়ার আগে বন্দনাকে শাড়ি এবং তাঁর ছেলেকে চকোলেট উপহার দেন অনির্বাণবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health Missonaries of Charity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE