চায়ের দোকানে ব্যস্ত পিন্টু। ছবি: মোহন দাস
ভোলবদল! নাকি অন্য কিছু? পুলিশের একাংশ বলছেন, এটা ভোলবদলই।
কয়েক মাস আগেও তাঁর নাম শুনলে হাড়হিম হয়ে আসতো আরামবাগের অনেক মানুষের। সেই শেখ পিন্টু ওরফে পিন্টু রায় এখন আরামবাগ থানার পাশেই চা, ঘুগনি-রুটি আর ডিমের টোস্ট বানাতে ব্যস্ত। এই পিন্টুই আগে পুলিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। আরামবাগ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, পিন্টুর বিরুদ্ধে সেখানে চুরি, ডাকাতি, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ ২২টি মামলা ঝুলছে। পিন্টুর নিজের হিসেবে হুগলি এবং পাশের জেলার কয়েকটি থানা মিলিয়ে ৪৫টির বেশি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সেই পিন্টুই ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরামবাগ থানার পাশে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি বলছেন, “পুলিশের সাহায্যে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা শুরু করতে পেরেছি।” হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “আমরা চাই সমাজ ভাল থাকুক। যাঁরা ভাল হতে চান তাঁদের সেই সুযোগ করে দেওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন:ঘোমটা খুলতেই চমক, সোহেলের পাশে রাজেশ!
কী ভাবে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? পিন্টু জানান, ছোটবেলাতেই তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই টানাপড়েনের মাঝে তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৪ বছর বয়সে এক শিক্ষিকার ঘরে ঢুকে রান্না করে রাখা ভাত ও মাংস খেয়ে হাঁড়ি, প্রেসার কুকার, থালা চুরি করেন। সেই শুরু। তার বছর ছয়েকের মধ্যেই তিনি ডাকাত হয়ে ওঠেন। শুধু হুগলি নয়, বর্ধমানের কালনা, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থেকেও তাঁর ‘ডাক’ আসতো। পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েন তিনি।
বদলে গেলেন কী ভাবে?
আরামবাগ থানার এক কর্তা জানান, গত ২৬ জুলাই আরামবাগে একটি পুরনো ডাকাতির মামলা থেকে জামিন পায় পিন্টু। কিন্তু তাঁকে বাইরে রাখা মানেই তো ফের ডাকাতির সম্ভবনা। তাই পুলিশের কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, অন্য কোনও মামলা দিয়ে পিন্টুকে ফের জেলে ঢোকাতে হবে। এই আলোচনার সময়েই আরামবাগ থানার আইসি শান্তনু মিত্রের কাছে এসে হাজির হন পিন্টু। জানান, তিনি থানার সামনে চায়ের দোকান করতে চান। এই কথা শুনে প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলেও তাঁকে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
পিন্টু জানিয়েছেন, তাঁর দোকানে এখন প্রতি দিন গড়ে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এখনও কিছু যদি-কিন্তু রয়ে গিয়েছে। কারণ এর আগে ২০০৬ সালেও পিন্টুকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন ক্যাসেট এবং বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু বছর দেড়েক চলার পরেই দোকানে তালা মেরে বেপাত্তা হয়ে যান। পিন্টুর দাবি, ‘‘তখন আরামবাগে কোনও উৎসব হলেই আমাকে থানায় ঢুকিয়ে রাখা হতো। কোনও চুরি-ডাকাতির কিনারা না হলে আমাকেই দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। বিনা দোষে জেলে থাকতে হয়েছে। তাই দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছিলাম।’’
পিন্টুর বাড়ি আরামবাগের তেঘড়িতে। বাড়িতে রয়েছেন মা, স্ত্রী এবং দুই ছেলে নাড়ু ও গোপাল। বড়ো ছেলে পঞ্চম শ্রেণী এবং ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। মা এবং স্ত্রীর আশা, পিন্টু এ বার শোধরাবে।
পিন্টুর নিজের কথায়, ‘‘দু’টো ছেলেকে ভাল মানুষ করতে হবে। আমার কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব। যাই হয়ে যাক, আর খারাপ পথে যাব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy