Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ভাঙচুর শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে

গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর নালিশ, বিক্ষোভ

মৃতা পার্বতী চক্রবর্তী (২৪) রিষড়ার মোড়পুকুর ২ নম্বর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা।  তাঁর পরিবারের তরফে থানায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

শোকার্ত: মৃত পার্বতী চক্রবর্তী (বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মহিলার স্বামী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: মৃত পার্বতী চক্রবর্তী (বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মহিলার স্বামী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ চলল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে।

মৃতা পার্বতী চক্রবর্তী (২৪) রিষড়ার মোড়পুকুর ২ নম্বর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের তরফে থানায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। গাফিলতি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিনই হাসপাতালে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত হয়।

হাসপাতাল সুপার কমলকিশোর সিংহের দাবি, মহিলা সুস্থই ছিলেন। গর্ভস্থ সন্তানও ভাল ছিল। শুক্রবার রাত ৮টার পরে চিকিৎসক পরীক্ষা করেন। রাত সওয়া ১টা নাগাদ রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা অনেক কমে যায়। সুগারের মাত্রা তোলার চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি। সুপারের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট মাপকাঠির বাইরে সিজার করা যায় না বলেই করা হয়নি। মৃত্যুটা আকস্মিক। পাঁচ চিকিৎসকের বোর্ড বসিয়ে ময়নাতদন্ত হয়েছে।’’

মৃতার পরিজনরা জানিয়েছেন, গত বুধবার বিকেলে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে পাবর্তীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, বধূ এবং গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ। নির্দিষ্ট সময়ে স্বাভাবিক প্রসব অথবা পরিস্থিতি বুঝে অস্ত্রোপচার করা হবে। আর শুক্রবার রাত সওয়া ২টো নাগাদ পরিবারকে হঠাৎ জানানো হয়, পার্বতী মারা গিয়েছেন।

এই খবর চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি হাসপাতালে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার সকালেও হাসপাতাল-সুপারের ঘরে বিক্ষোভ দেখান মৃতার পরিজনরা।

মৃতার স্বামী দিলীপ চক্রবর্তী জানান, আগামী ২২ নভেম্বর প্রসবের কথা ছিল পার্বতীর। তবে ১৫-১৬ দিন ধরে পেটে যন্ত্রণা হওয়ায় দু’বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দু’বারই ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের বুধবার বিকেলে ভর্তি করানো হয়। দিলীপ বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুদের হাতে-পায়ে ধরে সিজার বা তেমন বুঝলে রেফার করতে বলেছিলাম। ওঁরা শেষ পর্যন্ত কোনওটাই করেননি।’’

দিলীপ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁর মা পার্বতীকে খাইয়ে দিয়ে যান। তখন তিনি সুস্থই ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে তাঁর কথাও হয়। গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পর্যবেক্ষণের মধ্যেই এত অল্প সময়ে অবস্থা এতটা খারাপ কী করে হল? হাসপাতালের গাফিলতিতেই স্ত্রী মারা গেল।’’

পার্বতীর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক-নার্সরা রোগীর পরিজনদের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলেন না। রোগীর বেড টিকিট নার্সদের কাছে থাকে। শনিবার দেখা যায়, বুধবারই বেড টিকিটে পার্বতীকে ছুটির কথা লেখা ছিল। অথচ সে বিষয়ে পরিবারকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ।

আবার এ দিনই ওই হাসপাতালে দীপালি দিগার নামে জাঙ্গিপাড়ার এক মহিলার সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু হয়। স্বামী সুকান্ত দিগার জানান, স্ত্রী জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রক্তচাপ বেশি থাকায় বুধবার রাতে ওয়ালশ হাসপাতালে আনা হয়। রাতেই অস্ত্রোপচার করে সন্তান হয়। সুকান্ত ব‌লেন, ‘‘মঙ্গলবার ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। সুস্থ বাচ্চা হঠাৎ মারা গেল কী করে, বুঝতে পারছি না।’’ওই পরিবারের তরফে অবশ্য অভিযোগ করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ঠান্ডার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy