নিরাপত্তার বালাই নেই হাওড়ার দুই এটিএম কাউন্টারে।
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি রক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টার লুটের সাক্ষী থেকেছেন হাওড়া ও হুগলি জেলার বাসিন্দারা। গত শনিবার রাতেও আন্দুল বাসস্ট্যান্ডে রক্ষীবিহীন দু’টি এটিএমে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। শনিবারের ঘটনার পর পুলিশ দাবি করেছিল, তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু আদতে ধরা পড়েনি কোনও দুষ্কৃতীই। পুলিশের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএমের সুরক্ষা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির তরফেই বিশেষ হেলদোল নেই। বহু এটিএমে নজরদার ক্যামেরাও লাগানো হয়নি বলেও দাবি পুলিশের।
হাওড়া জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৪৮৭টি ব্যাঙ্কের শাখা আছে। সব ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার থাকলেও বেশিরভাগেরই কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। সম্প্রতি আন্দুল বাজারে যে দু’টি এটিএমে দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল, তার মধ্যে একটি বেসরকারি। অন্যটি সরকারি। বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে কোনও টাকা না থাকলেও সরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লুট হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কগুলির নামে এটিএম চললেও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সিকে এটিএম চালানোর দায়িত্ব দিয়ে দেন। ফলে সেগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে এজেন্সিরাই। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এজেন্সিগুলি যে পরিমাণ টাকা এটিএমে ভরে তার একটা বিমা করা থাকে। ফলে টাকা লুট হলে তা বিমা সংস্থার কাছ থেকে এজেন্সিগুলি ফেরত পেয়ে যায়। পুলিশের বক্তব্য, বিমা থাকার কারণেই এজেন্সিগুলি এটিএমে রক্ষী রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
শুধু তাই নয়, টাকা লুট হলে তদন্তে যে ন্যূনতম সহায়তা দরকার সেটাও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বা এজেন্সিগুলির তরফে মেলে না বলেও পুলিশের অভিযোগ। হাওড়া সিটি পুলিশ বা গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা জানান, দুষ্কৃতীরা এটিএমে হানা দিয়ে প্রথমেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেয়। সেই কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কগুলি বা এজেন্সিগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা এটিএমের বাইরে কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসাক। সেটা হলে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা এজেন্সিগুলি সেই পরামর্শেও কর্ণপাত করেনি বলে পুলিশের অভিযোগ।
শুধু তাই নয়, পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, এটিএমে বিশেষ যন্ত্র বসানোর জন্য। যার দ্বারা এটিএমে দুষ্কৃতীরা ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করলে সরাসরি সঙ্কেত যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কাছে থাকা একটি যন্ত্রে। মুম্বইয়ে এই ব্যবস্থা চালু আছে। পুলিশের অভিযোগ, সেই পদ্ধতিও মানতে অস্বীকার করেছে রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি।
হুগলিতেও সাম্প্রতিক অতীতে হুগলি পুলিশ (গ্রামীণ) এবং কমিশনারেট এলাকায় এটিএম থেকে টাকা লুটের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারপর এখনও অরক্ষিতই জেলার বহু এটিএম কাউন্টার।
নিরাপত্তারক্ষীর অভাবে মশাটের একটি এটিএম কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গত কয়েক মাস আগে। চণ্ডীতলা জুড়ে এক বছর আগে ঘটা করে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। কিন্তু তারপরও এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কমেনি। উল্টে এখানেই পর পর দুটি ব্যাঙ্কের এটিএম লুট হয়েছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন
এলাকার মানুষ।
গত বছরের ৯ অক্টোবর চণ্ডীতলার মশাট বাজারে নিরাপত্তারক্ষীহীন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের ভল্ট গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে টাকা লুট করে দুষ্কৃতীরা। ডাকাতির সময় তারা এটিএম কাউন্টারের শাটার নামিয়ে দেয়। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। একই কায়দায় ১০ অক্টোবর ডানকুনির টিএন মুখার্জি রোডের পাশে একটি বেসরকারি এটিএম থেকে টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, দু’টি ঘটনারই তদন্ত চলছে। তবে ধরা পড়েনি কোনও দুষ্কৃতী।
চণ্ডীতলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কার্তিক দাসের কথায়, ‘‘দুটি এটিএম থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লুট করে পালাল দুষ্কৃতীরা। কয়েক মাস আগে ডানকুনিতে দুপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডাকাতি হল। ফলে পুলিশের নজরদারির অভাব তো স্পষ্ট।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে আমরা বারবার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এমনকী অনেক এটিএমে তো অ্যালার্মের ব্যবস্থাও নেই।’’
ব্যাঙ্কের তরফে জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলেন, ‘‘এটিএমগুলিতে রক্ষী রাখা হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নীতি অনুযায়ী ঠিক করা হয়। নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলি নিয়মিত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে।’’
একটা সময়ে কিন্তু প্রায় প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী বহাল করা হত। এখন তা নেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, এটিএমে টাকা তুলতে এসে গ্রাহকেরা দুষ্কৃতীদের পাল্লায় পড়তেন। বিশেষ করে মহিলারা। সেই ঘটনা রুখতেই তখন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। পরে এমন ঘটনা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়।
তা হলে উপায়?
আন্দুলের ঘটনার পরে নজরদারি বাড়ানোর উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, সাঁকরাইলে মোট ৫৫টি এটিএম আছে। রাতে মোটরবাইকে করে সেগুলিতে আরও বেশি নজরদারি চালানো হচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সিটি পুলিশের অন্য এলাকাতেও। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, তাঁরাও নজরদারি বাড়িয়েছেন।
তথ্য সহায়তা: নুরুল আবসার ও গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy