বন্ধু: মায়ের সঙ্গে গৌরব। নিজস্ব চিত্র
স্বনির্ভর সুপাত্র চাই।
পাত্রীর বয়স ৪৫। স্নাতক। বই পড়তে এবং গান শুনতে ভালবাসেন। চন্দননগর নিবাসী।
‘পোস্ট’ হয়েছে ফেসবুকে। প্রেরকের নাম— গৌরব অধিকারী। মা দোলাদেবীর জন্য রবিবার তাঁর ওই ‘পোস্ট’ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১০ হাজার ‘লাইক’ পড়েছে। ২৬০০ জনেরও বেশি ‘শেয়ার’ করেছেন। ‘কমেন্ট’ করেছেন পাঁচশোরও বেশি মানুষ। তাতে প্রায় পুরোটাই এই নজিরবিহীন উদ্যোগের প্রশংসা। যে দু’একটি কটূক্তি রয়েছে, তার জবাব গৌরবকে দিতে হয়নি। তাঁর ফেসবুক-বন্ধু বা অন্যেরাই তা নস্যাৎ করেছেন।
‘‘ভাইরাল করার জন্য বা নিজে বিখ্যাত হওয়ার জন্য এই পোস্ট করিনি। রান্নাঘরে মা জীবনটা কাটিয়ে দেবে, এটা চাই না। আমি চাই, মা আবার আগের মতো জীবন কাটাক। বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলুক। মায়ের একাকীত্ব ঘোচানো আমার দায়িত্ব, কর্তব্যও। তাই মায়ের বিয়ে দিতে চাই। কেউ বাঁকা চোখে দেখলে তা আমার কাছে গৌণ।’’— বলছেন আকাশবাণীর উপস্থাপক, বছর ছাব্বিশের গৌরব।
আরও পড়ুন:গণপিটুনিতে দোষী সাব্যস্ত ১২ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড
২০১৪ সালে গৌরবেব বাবা মারা যান। তারপর থেকে চন্দননগর স্টেশনের কাছে বৌবাজার শীতলাতলায় মা-ছেলের সংসার। কর্মসূত্রে বেশির ভাগ সময়ে গৌরবকে বাইরে থাকতে হয়। ফলে, দোলাদেবী বাড়িতে একাই থাকেন। বই পড়ে, গান শুনে সময় কাটান। মাসতিনেক আগে গৌরব যখন প্রথম কথাটা পেড়েছিলেন, দোলাদেবী মনে করেছিলেন, ছেলে মজা করছে! কিন্তু নাছোড়বান্দা ছেলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মাকে রাজি করে ফেলেন। রবিবার ছিল গৌরবের জন্মদিন। সে দিনই ওই ‘পোস্ট’।
দোলাদেবী জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস আগে ছেলের ইচ্ছের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ি। ছেলে খুব কাছের দু’-এক জন বন্ধুকেও বিষয়টা বলেছিল। ওরাও আমাকে বোঝায়। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। শেষে ছেলের যুক্তি, ইচ্ছের কাছে হার মানতে হয়।’’
গৌরব ইংরেজিতে স্নাতক। আকাশবাণীর কাজ ছাড়াও পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করেন। ঘরময় অজস্র বই। মায়ের জন্য তাঁর এই চেষ্টাকে যাঁরা ফেসবুকে কুর্নিশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অর্পিতা সরকার বলেন, ‘‘ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে অনেক সময় বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়। ট্রোলড-ও হতে হয়। এটা নিয়ে বলায় গৌরব আমাকে বলেছিলেন, মায়ের সুখের থেকে বড় কিছু ওঁর কাছে নেই। এমন ছেলের ইচ্ছে পূরণ হোক। ওঁর মা যেন একজন ভাল জীবনসঙ্গী পান।’’ অনির্বাণ মাইতি নামে আর এক পরিচিত বলেন, ‘‘আমরা গৌরবের পাশে আছি।’’ গৌরবের এই সংবেদনশীলতার প্রশংসা করেছেন মনোবিদ-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপও। তিনি বলেন, ‘‘আজকের দিনের ছেলেমেয়েরা যে সংবেদনশীল হয়ে উঠছেন, বাবা-মায়ের অনুভূতি নিয়ে ভাবছেন, এটা সমাজের জন্য শুভ লক্ষণ। এই সাহসী সিদ্ধান্ত দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক।’’
পাত্রের খোঁজ আসতে শুরু করেছে। সেই দলে ভিন্ রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক, প্যারিসের পাত্রেরাও রয়েছেন। সোমবার দুপুরে ফোনে সেই পাত্রের খোঁজখবর নিতে নিতেই গৌরব বলেন, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার কথা এখনও ততটা ভাবা হয় না। এই শিকলটা ভেঙে যাক। অনেকেই বলেছেন, তাঁরাও তাঁদের মাকে বিয়ে দিতে চান। কিন্তু সমাজের কথা ভেবে এগোতে পারেন না। আমি এগোতে চাই। দৃষ্টান্ত তৈরি হলে আরও অনেকে যদি সাহস পান, সেটা আমার জন্য অনেক।’’
কিন্তু একজন নতুন মানুষকে মায়ের পাশে মেনে নিতে তাঁর অসুবিধা হবে না?
গৌরব জানিয়ে দেন, ‘‘আমাদের লোভ নেই। যিনি আসবেন, ভাল মনের মানুষ হলেই চলবে। আমাদের সঙ্গেই থাকতে পারেন। মা-ছেলের এই বন্ধনকে সম্মান জানাতে হবে।’’ ফের সাত পাকে বাঁধা পড়ার আগে একই বক্তব্য দোলাদেবীরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy