মায়ের সঙ্গে প্রেমজিৎ দাস। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। মা সেলাইয়ের কাজ করেন। বাবা অসুস্থ। শরীর অনুমতি দিলে দিনমজুরের কাজ করেন। না-দিলে ঘরে বসে থাকতে হয়। তাই অন্নের সংস্থানে মিষ্টির দোকানে কাজ নিতে হয়েছিল প্রেমজিৎ দাসকে। গোঘাটের ‘কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশন বহুমুখী বিদ্যালয়ের প্রেমজিৎ মাধ্যমিকে ৬৬৯ নম্বর পেয়েছে। এ বার তার লক্ষ্য উচ্চমাধ্যমিক। তারপর আইআইটি। অভাব-ই তার জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই জেদকে অস্ত্র করেই লক্ষ্যভেদ করতে চায় কামারপুকুরের প্রেমজিৎ।
মাধ্যমিকের ফল আত্মবিশ্বাসী বাড়িয়ে দিয়েছে প্রেমজিতের। তার কথায়, “যত আর্থিক কষ্ট থাকুক না কেন, আইআইটি-তে পড়ার লক্ষ্য আমি ছাড়ছি না। গায়ে-গতরে খাটব। পড়াশোনাও চালাব। আমারও বিশ্বাস, এতদিন যেমন সহপাঠী, তাদের অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের সাহায্য পেয়েছি, ভবিষ্যতেও তেমন পাব।”
প্রতিষ্ঠা পেলে কী করবে, তা-ও ঠিক করে রেখেছে প্রেমজিৎ। তার কথায়, ‘‘আমার লড়াই সফল হলে আমার মতো গরিব ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও বেঁচে থাকবে। নিজের উপার্জনের একটা অংশ তাদের স্বপ্নপূরণে কাজে লাগাব।”
অভাব-ই প্রেমজিতকে লড়তে সাহায্য করেছিল। সেই লড়াইয়ে তার পাশে ছিল রাজীব নায়েক, অরিত্র পণ্ডিত, অর্ঘেন্দু সরকার, সৌমদীপ চোঙ্গদার, অনিকেত গুপ্ত, অভিজিৎ সেনগুপ্তর মতো সহপাঠী ও তাদের অভিভাবকেরা। রাজীব বলে, “প্রেমজিৎ-এর জেদটাই আমাদের সকলকে ওর প্রতি আকর্ষণ করে। আমরা যতটা সম্ভব ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।” সহপাঠীদের অনুরোধেই তাদের গৃহ-শিক্ষকেরা বিনা পয়সায় পড়িয়েছিলেন প্রেমজিতকে।
প্রেমজিতের মা কাজল দাস বলেন, “সেলাইয়ের কাজ করে স্বামী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালানো বড় কঠিন। পয়সার অভাবে স্বামীর ভাল চিকিৎসা করানো যায়নি। ছেলের পড়াশোনা নিয়েও বিশেষ ভাবতে পারিনি। আমি চাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক ছেলে। সংসারের অভাব ঘোচাক। অনেক মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন।”
কামারপুকুর চটিতে যে মিষ্টির দোকানে প্রেমজিৎ কাজ করে, সেই দোকানের মালিক কৌশিক দাস বলেন, “এত দারিদ্রের মধ্যে থেকেও পড়াশোনার প্রতি প্রেমজিতের নিষ্ঠা দেখে গর্ব হয়। আমি ওকে বলেছিলাম, কোনও গৃহ-শিক্ষক রাখলে আমি পয়সা মেটাব। কিন্তু সে সাহায্য ও নিতে চায়নি।”
প্রেমজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী কল্যাণেশানন্দ বলেন, “আমাদের ওই ছাত্র পড়াশোনায় যেমন ভাল, তেমনই ওর আচার-আচরণও ভাল। নাটক-ও খুব ভাল করে। স্কুল থেকে যতটা সম্ভব ওকে সাহায্য করা হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy