ফাইনাল দেখছেন নেলি এবং উজ্জ্বল। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
শ্বশুরবাড়ির শহরটা হঠাৎ যেন ভোল বদলে ফেলেছে। চন্দননগর যেন ফিরে গিয়েছে ফরাসি শাসনে। সকাল থেকেই মণ্ডলবাড়ির গৃহবধূ নেলি মণ্ডলের মনে হচ্ছিল, ভারতে নয়, গবেষণার দিনগুলোর মতো প্যারিসেই রয়েছেন তিনি। চন্দননগরের স্ট্র্যান্ড রোড যেন আইফেল টাওয়ারের সামনেটা। ফরাসি মিউজিয়াম যেন এক খণ্ড ‘দ্য ল্যুভর’!
রাত বাড়তেই ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের গণ-হিস্টিরিয়ায় সেই চন্দননগর এমনই আক্রান্ত যে, ঢাক-ঢোল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন মানুষ। ফ্রান্সের পতাকা জড়িয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। রবিবার রাতে ঘুমোয়নি চন্দননগরও। জয়োচ্ছ্বাসে মণ্ডলবাড়ির লোকজনের চোখেও যেন ঘুম নেই। আজ, সোমবার চন্দননগরে এমনিতেই অঘোষিত ছুটি হওয়ার কথা।
খেলা শুরুর আগে বছর চুয়ান্নর নেলি বলছিলেন, চলতি বিশ্বকাপ তাঁর যৌবনের স্মৃতি-সরণি ফিরিয়ে দিয়েছে। দিয়েছে মনখারাপও। ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছে প্রিয় দল ব্রাজিল। ফ্রান্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল জন্মভূমি বেলজিয়ামেরও। মন বলছে, ব্রাজিল, বেলজিয়াম না পারুক, অন্তত কলেজ জীবনের ঘর-বাড়ি ফ্রান্স মান রাখুক।
ফ্রান্সের প্রতি এত টান কেন? নেলি জানান, বেলজিয়ামের লেউভেনে জন্ম তাঁর। গবেষণার কাজে সাত বছর কাটিয়েছেন প্যারিসে। কিছু দিন ছিলেন নেদারল্যান্ডসেও। পরে ভারতে আসেন। সে সময়েই কাজের সূত্রে পরিচয় উজ্জ্বলের সঙ্গে। বিয়ে করে ভারতেই রয়ে যান। নেলি বলছিলেন, ‘‘আমরা দু’জনেই একটা সময়ে ইউরোপে ছিলাম। প্রথম দেখাতেই উজ্জ্বলকে ভাল লেগে যায়। ১৯৮৯-এ আমরা বিয়ে করি। ছেলে নীলদীপ হওয়ার পরে ঠিক করি, ভারতেই থাকব। আর আমাদের চন্দননগর তো পুরো ফ্রান্সই!’’
তাঁর দেশকে হারিয়ে দিয়েছে এই ফ্রান্স! নেলি বললেন, ‘‘ওই দিনের খেলায় জানতাম দারুণ ল়ড়াই হবে।’’ তাঁর দাবি, দু’টো পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বেলজিয়াম। বললেন, ‘‘প্রথমে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরে মনে হল, ফ্রান্সও আমার দেশ! ’’
ঘড়ি ধরে রাত সাড়ে ৮টা। শত উত্তেজনা তখন টিভির সামনে। বিপক্ষের বক্সে ফ্রান্সের খেলোয়াড়েরা পৌঁছতেই গোল, গোল চিৎকার শুরু করছেন নেলি। ম্যাচ যখন ১-১, প্রবল চাপে তিনি। পেনাল্টির দাবি উঠতেই ভাবখানা এমন, যেন নিজেই টিভি সেটে ঢুকে পড়বেন। এমবাপের গোলের পর লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘‘এই ছেলেটা বড় প্লেয়ার হবে। এত কম বয়সেই উপার্জনের টাকার অনেকটা অংশ দুঃস্থদের দান করছে। সব সময় ওর জয় চাইব।’’
ম্যাচের শেষ পর্বে এসে বললেন, ‘‘ক্রোয়েশিয়ার জন্য খারাপ লাগছে। অনেক লড়াই করে ওরা এই পর্যন্ত এসেছে। তবে ফ্রান্স ফ্রান্সই। যোগ্য দল হিসেবেই জিতল।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ফরাসিরা সহজে হারে না।’’
পাশে বসা স্বামী অবশ্য কোনও দল নয়, নিছক খেলার টানেই বসেছিলেন টিভির সামনে। ম্যাচ চলাকালীন তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার দল জার্মানি। তারা হেরে গিয়েছে। ফ্রান্স ঠিক আছে। জিতলে ভাল।’ প্রতিবাদ করে স্ত্রী বলেন, ‘‘জিতলে ভাল মানে? জিততেই হবে।’’
খেলা শেষে নেলির মুখে তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘‘মিলিয়ে দিলাম তো! বলেছিলাম না ফ্রান্সই জিতবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy