স্বস্তি: মালাপাড়া কালীতলায় নিজেদের ঘরে রাম দাসের স্ত্রী-মেয়ে। ছবি: তাপস ঘোষ
এ বার পুজোর কেনাকাটা যে তিনি করতে পারবেন, ভাবেননি পীযূষ চৌধুরী। হাতে টাকা আসায় সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন।
বোনের চিকিৎসা খরচ সামলে উঠতে পারছিলেন না ববিতা চৌধুরী। দাদার হাতে টাকা আসায় সেই চিন্তা কিছুটা মিটেছে।
দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে, পুজোর মুখে হাসি ফুটেছে চন্দননগরের বন্ধ গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায়। দীর্ঘদিনের দাবি কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। গত বুধবারই সরকারি প্রকল্পের (ফাউলাই) ভাতা হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন ওই জুটমিলের ৩৬০০ শ্রমিক। বকেয়া রয়েছে আরও বেশ কয়েক মাসের ভাতা। তবু ওই ১০ হাজার টাকাই দুশ্চিন্তার অন্ধকারে ডুবে থাকা পরিবারগুলিতে আলো জ্বেলেছে। পুজোর দিনগুলিতে আর সকলের মতো তাঁদের ছেলেমেয়েরাও যে নতুন জামা-জুতো পরতে পারবে, ভেবে খুশি শ্রমিকেরা। তাঁরা কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন।
মালাপাড়া কালীতলা কুলি লাইনের বাসিন্দা রাম দাসের ১০ ফুট বাই ৮ ফুটের ঘরে অভাব যেন গিলে খেতে আসে! ঘরে চৌকির উপরে বসে হাত তুললে অবধারিত ভাবে তা ঠেকে যায় পাখার ব্লেডে। তবে, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনও দুর্ঘটনার ভয় নেই! কারণ, ওই পাঁচ ঘণ্টা কুলি লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। ওই জুটমিলের ‘টুইটিং’ বিভাগের পুরনো কর্মী রাম দাসের কাজ নেই ১৬ মাস। বেশ কিছুদিন ধরে সকালে উঠেই তিনি গঙ্গার ও পারে বিভিন্ন মিলে বদলির কাজ খুঁজতে যান। তাঁর চার মেয়ে। বড় শীতলা ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী। সংসারের হাল ধরতে তিনি গৃহশিক্ষকতা করেন। কিছু টাকাও জমিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবার কাজ নেই। পাড়ার মুদি দোকান থেকে বন্ধুবান্ধব—গত কয়েক মাসে সংসার চালাতে গিয়ে বাবার অনেক ধার হয়ে গিয়েছে। ফাউলাইয়ের টাকায় সেই ধার কিছুটা মেটানো যাবে। বাবা আমাদের জন্য পুজোর জামাকাপড়ও কিনবে বলেছে।’’
ওই মিলের ‘প্যাকিং’ বিভাগের কর্মী উমেশ ঠাকুরের তিন ছেলে। বড় রাহুল হিন্দি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দীর্ঘদিন মিল বন্ধ থাকায় উমেশ মানকুণ্ডুর পালপাড়ায় একটি সেলুন খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফাউলাইয়ের টাকায় সেলুনের কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনেছি। ছেলেদের পুজোর বাজারও করব।’’ রাহুল বলেন, ‘‘মিল আর খুলবে বলে মনে হয় না। তবু ভাতার টাকা পাওয়ায় বাবার কিছুটা চিন্তা দূর হয়েছে।’’ আর এক শ্রমিক ধর্মেন্দ্র চৌধুরীর বোন ববিতাও মানছেন, ফাউলাই-এর টাকায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তাতে বোনের চিকিৎসারও কিছুটা সুরাহা হবে।
অনেক দিন বাদে নিজের মন ভাল থাকার কথা সকলকে বলছেন মিলের ‘বিম’ বিভাগের কর্মী পীযূষ চৌধুরী। কারণ, ইতিমধ্যেই তিন সন্তানের জামাকাপড় কেনা হয়ে গিয়েছে। হাতে কিছু নগদ টাকাও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy