সোচ্চার: কোন্নগরের জিটি রোডে এসএফআইয়ের অবরোধ। ছবি: প্রকাশ পাল
দেশের রাজধানীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামলেন হুগলির নাগরিকরা। পৌষের সন্ধ্যায় রাজপথে দাঁড়িয়ে গঙ্গাপাড়ের এই জেলা অঙ্গীকার করল, যমুনার তীরের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রহৃত পড়ুয়া এবং শিক্ষিকার পাশে রয়েছেন তাঁরা।
রবিবার সন্ধ্যায় জেএনইউ-তে পড়ুয়া এবং শিক্ষিকার উপরে হামলার কথা জেনে গোটা দেশের মতোই হুগলিতেও শিক্ষা মহল এবং নাগরিক সমাজ নিন্দায় মুখর হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় ব্যান্ডেল চার্চের সামনে ‘ঐক্যতান’ নামে একটি নাগরিক মঞ্চের ডাকে সভা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানানো হয়। অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।
সভা শুরু হয় সমর চক্রবর্তীর গান দিয়ে। সভার অন্যতম উদ্যোক্তা ভিয়েত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেএনইউয়েতে আরএসএস এবং এবিভিপি যে আক্রমণ করেছে, তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কেন্দ্রে এখন এমন একটা সরকার রয়েছে, কোনও বিরুদ্ধ স্বর উঠলেই যারা টুঁটি টিপে ধরার মরিয়া চেষ্টা করছে। গোটা দেশে নানা ঘটনা এ কথাই জানান দিচ্ছে। তাই, দিল্লিতে রক্তাক্ত ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবেই।’’
সভায় বক্তব্য পেশ করেন শ্যামলী দাশগুপ্ত এবং প্রবীণ শিক্ষক সনৎ রায়চৌধুরী। উদ্যোক্তাদের তরফে সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেএনইউ-র মেধাবী ছাত্রীর মুখ যে ভাবে রক্তাক্ত করা হল, তা মুখ বুজে মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরই এই বর্বর আক্রমণে দাঁড়ি টানতে পারে।’’
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকেরাও ওই ঘটনার প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন। রিষ়ড়ার বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক সঞ্জীব আচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘চেতনা এবং শিক্ষার কারণে ছাত্র সমাজের চোখে ভুল-ঠিক সব ধরা পড়ে যাচ্ছে। হিন্দুত্বের বড়ি ছাত্রছাত্রীরা গিলছেন না। তাঁদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ তৈরি করা যাচ্ছে না। সেই কারণেই দেশের নানা প্রান্তে শিক্ষাঙ্গনকে ওরা রক্তাক্ত করছে। নিজেরাই ভয় পেয়ে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। সামাজিক মূল্যবোধ ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে চাইছে।’’ জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণব মুখোপাধ্যায় দিল্লির ওই ঘটনাকে ‘ফ্যাসিবাদ’ বলে চিহ্নিত করেন। তবে সকলেই মনে করেন, এই ভাবে আক্রমণ চালিয়ে পড়ুয়া বা শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের থামাতে হবে।
প্রতিবাদে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। কোন্নগরের বাটার মোড়ে জিটি রোড অবরোধ করে এসএফআই। রিষড়ায় ওয়েলিংটন চটকলের সামনে, চন্দননগর বাগবাজার মোড়ে, শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজার, চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় এবং সিঙ্গুরেও অবরোধ হয়। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, জাঙ্গিপাড়া, মশাট পুড়শুড়া-সহ নানা জায়গায় সভা, মিছিল হয়। পান্ডুয়ার মেলাতলা থেকে কলবাজার পর্যন্ত মিছিল করে ডিওয়াইএফ। খানাকুল বাজারে সভা করে আরএসপি। গোঘাটের অঘোরকামিনী প্রকাশচন্দ্র মহাবিদ্যালয় এবং কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মহা বিদ্যাপীঠে টিএমসিপি মিছিল বের করে।
এসএফআইয়ের কর্মসূচিতে কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল জেএনইউ-র প্রহৃত ছাত্রনেত্রী ঐশী ঘোষের রক্তাক্ত মুখের ছবি। সঙ্গে ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পোস্টার। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অমৃতেন্দু দাস বলেন, ‘‘শিক্ষা মানুষের মধ্যে চেতনা আনে বলে কেন্দ্রের সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাই তুলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বর্বর আক্রমণে ছাত্রসমাজের মনোবলে এতটুকু চিড় ধরানো যাবে না।’’
হাওড়াতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ সভা ও ধিক্কার মিছিল করে। বিকেলে পথে নামে যুব তৃণমূল। আমতার শেওড়াবেড়িয়া থেকে সিয়াগড়ি পর্যন্ত মিছিল করে তারা। শ্যামপুর বাজারে মিছিল করে এসএফআই। যোগ দেন ছাত্রছাত্রীরা। মিছিলের শেষে পথসভা হয় শ্যামপুর বাসস্ট্যান্ডে।
শ্যামপুর-২ ব্লক অফিসের সামনে কংগ্রেসের অবস্থান থেকেও জেএনইউ কাণ্ডের নিন্দা করা হয়। অবস্থান মঞ্চে ছিলেন সিপিএম নেতারাও। বাগনান পুরনো বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদসভা করে ডিওয়াইএফআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy