স্বপ্ন: মুদির দোকানে সূর্যকান্ত। ছবি: তাপস ঘোষ
কোথায় মুদি দোকানে চাল-ডাল, তেল-নুনের ফর্দ মেলানো, আর কোথায় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলদের চার-ছক্কা বা যশপ্রীত বুমরাহ, কাগিসো রাবাডাদের প্রতি বলের হিসেব!
হুগলির সদর শহর চুঁচুড়ার বাসিন্দা সূর্যকান্ত পণ্ডার জীবনে এটাই সত্যি হতে চলেছে। এক মাস পরে দুবাইতে বসছে আইপিএল-এর আসর। সেখানে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের দায়িত্ব সামলাবেন সূর্য। রঞ্জি, কোচবিহার ট্রফি থেকে টি-টোয়েন্টি— ঘরোয়া নানা প্রতিযোগিতায় স্কোরারের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তবে, এত বড় মঞ্চে ডাক এই প্রথম। স্বভাবতই উত্তেজনায় ফুটছেন একদা মুদি দোকানের দৈনিক মজুরির কর্মী।
ছত্রিশ বছরের যুবকের কথায়, ‘‘বিশ্বের তাবড় ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলে। নিজে ক্রিকেটার হতে না পারলেও ক্রিকেটের এমন মঞ্চে যুক্ত থাকতে পারাই বা কম কিসে! বলতে পারেন, স্বপ্ন সার্থক হবে।’’ আজ, বুধবার ম্যাঙ্গালোর রওনা হবেন তিনি। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ক্রিকেট সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দেবেন। আগামী ২৭ অগস্ট উড়ে যাবেন দুবাইতে।
সূর্য বাড়ি আদতে ওড়িশার বালাসোরে। বাবা পূর্ণচন্দ্র পণ্ডা চুঁচুড়ায় রান্নার কাজ করতেন। তিনি গ্রামে ফিরে ছেলেকে খেলার মাঠের গল্প শোনাতেন। মাধ্যমিক পাশ করে ২০০০ সালে সূর্য চুঁচুড়ায় বাবার কাছে চলে আসেন। খড়ুয়াবাজারে ভাড়াবাড়ি থেকে দুপুরে চলের যেতেন চুঁচুড়া ময়দানে। সেখানে খেলা দেখতে দেখতেই স্কোরার হিসেবে হাতেখড়ি। পরে পেশাদার স্কোরারদের সংস্পর্শে আসেন। চার-ছয়ের বন্যা হোক বা ঝুড়ি ঝুড়ি উইকেট পতন— হিসেব রাখা জলভাত হয়ে ওঠে।
এ সবের মধ্যেই ২০১০ সালে মা মল্লিমালা পণ্ডা মারা যান। বছর তিনেকের মধ্যে বাবাও মারা যান। সংসার চালাতে খড়ুয়াবাজারে একটি মুদি দোকানে কাজ নেন সূর্য। মজুরি দৈনিক ২৫০ টাকা। কামাই হলে মজুরি কাটা। তবে কাজের ভার তাঁকে খেলার মাঠ থেকে আলাদা করতে পারেনি। সকাল থেকে দোকানের কাজ সেরে টালির চালের একচিলতে ভাড়াবাড়িতে ফিরে দুপুরে নাকেমুখে গুঁজেই ছুটেছেন মাঠে। হাতে তুলে নিয়েছেন স্কোর লেখার খাতা। এই ভাবে স্থানীয় প্রতিযোগিতা থেকে জেলা ক্রিকেট লিগ, সেখান থেকে কলকাতা মাঠে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১৫ সালে পরীক্ষায় পাশ করে সিএবি-র স্কোরার বনে যান। সিএবি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জাতীয় স্তরেও সুযোগ মেলে। ২০১৮ সালে সিএবি-র সেরা স্কোরারের স্বীকৃতি পান। এ বার আইপিএলে উদয়।
শহরের ছেলের এ হেন সাফল্যে খুশি চুঁচুড়ার ক্রিকেট মহল। সূর্যের শিক্ষাগুরু রক্তিম সাধু বলেন, ‘‘অভাবকে হারিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকাই সূর্যকে সফল করেছে। বহু কষ্টেও ছেলেটা স্কোরের খাতায় মুখ গুঁজে থেকেছে। তারই স্বীকৃতি পাচ্ছে।’’
সূর্যের পরের লক্ষ্য বিসিসিআই-এর প্যানেলভুক্ত স্কোরার হওয়া। সে জন্য পড়াশোনা এবং তালিম নেওয়াও শুরু করেছেন তিনি। তবে আপাতত তাঁর পাখির চোখ— আইপিএলের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy