Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
International Mother Language Day

ভাষা দিবস উদ‌্‌যাপনে ভাষাহীনেরাও

জগৎপুরের এই আবাসিক স্কুলে ৮০ জন পড়ুয়া আছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে তারা। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অজয় দাস বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের কাছে মাতৃভাষা আদরের, গর্বের। এ দেশে এক কোটির উপরে বাক্‌-প্রতিবন্ধী আছে। যারা সাঙ্কেতিক ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। এই সাঙ্কেতিক ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাক্‌-প্রতিবন্ধী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ব্যবধান, তা দূর করা প্রয়োজন।’’

শ্রদ্ধা: উলুবেড়িয়ার জগৎপুর আনন্দভবনে মূক ও বধিরদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। ছবি: সুব্রত জানা

শ্রদ্ধা: উলুবেড়িয়ার জগৎপুর আনন্দভবনে মূক ও বধিরদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

ওদের মুখে ভাষা নেই। তবু উন্মাদনা দেখে কে!

শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল থেকেই মেতে উঠল উলুবেড়িয়ার জগৎপুর আনন্দ ভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলের পড়ুয়ারা। স্কুলের মাঠে তৈরি হয়েছিল শহিদ-স্মারক। ফাইজাতুন্নেসা, মন্দিরা মণ্ডল, শেখ রফিকুলদের কতই বা বয়স! কারও ১০, কারও ৭, কারও বা ৫ বছর। এক মাস ধরে রিহার্সালের পরে এ দিন তারা নৃত্য এবং মূকাভিনয় করে। তারা যে ভাষায় (সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ) কথা বলে, সেই ভাষার স্বীকৃতির দাবিও জানায় ওই কচিকাঁচারা।

জগৎপুরের এই আবাসিক স্কুলে ৮০ জন পড়ুয়া আছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে তারা। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অজয় দাস বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের কাছে মাতৃভাষা আদরের, গর্বের। এ দেশে এক কোটির উপরে বাক্‌-প্রতিবন্ধী আছে। যারা সাঙ্কেতিক ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। এই সাঙ্কেতিক ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাক্‌-প্রতিবন্ধী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ব্যবধান, তা দূর করা প্রয়োজন।’’ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন উলুবেড়িয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক নির্মলকুমার বাগানি। তিনি বলেন, ‘‘ভাষাহীনদের ভাষা দিবস উদ‌্‌যাপন অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত হলাম। ওদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করলাম। ওরাও বলল। ওদের দাবি আমিও সমর্থন করি।’’

ওই অনুষ্ঠানটি ছাড়াও এ দিন দুই জেলায় আরও নানা জায়গায় ভাষা দিবস পালন হয়। উলুবেড়িয়া পুরসভায় বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। বাগনানের ঘোড়াঘাটা স্টেশন রোডে অনুষ্ঠান হয় ‘একুশে ফেব্রুয়ারি কমিটি’র উদ্যোগে। সাহাড়ায় ‘যাযাবর’, টেঁপুরে ‘টেঁপুর নবাসন অনন্তরাম হাইস্কুল’ এবং ‘স্বজন’ যৌথ ভাবে অনুষ্ঠান করে। আমতায় ‘ঋ’ সাহিত্য পত্রিকা, রসপুর অগ্রগতি, জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাটে ‘ভোরের শিউলি’ পত্রিকা এবং পাঁচলার গঙ্গাধরপুর ‘শিক্ষণ মন্দির’-এর উদ্যোগেও দিনটি পালিত হয়। সর্বত্রই গান, কবিতা, পদযাত্রা এবং আলোচনাসভা হয়। একাধিক জায়গায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
হুগলির কোন্নগর পুরসভার উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয় শহরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িতে। মূল অনুষ্ঠান ছিল কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আসর। পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় জানান, অন্য জেলা থেকে বিশিষ্ট মানুষ অনুষ্ঠানে নিজেদের কবিতা পাঠ করেন। উত্তরপাড়ার পিআরসি ভবনে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের আয়োজনে অনুষ্ঠান হয়। তাতে ছিল ‘বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা। আরামবাগের ‘সবুজায়ন’ সংস্থার উদ্যোগে সারাদিন ধরে অনুষ্ঠান হয়। সকালে গৌরহাটি মোড়ে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান পর্বের পরে পুরাতন বাজার হয়ে রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। রবীন্দ্রভবন চত্বরে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানের পর বিকেল থেকে রাজা রামমোহন প্রেক্ষাগৃহে ভাষা দিবস নিয়ে আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মহকুমা তথ্য ওসংস্কৃতি দফতর ভাষা দিবস পালন করে মহকুমাশাসকের অফিসের প্রেক্ষাগৃহে। গান-কবিতা ছাড়াও দিনটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন আমন্ত্রিত স্থানীয় বিশিষ্ট মানুষরা। শ্রীরামপুরেও ভাষা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

uluberia chinsurah international language day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE