Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ব্লক সভাপতি পদ থেকে অপসৃত অনুগামী নেতা
TMC

দলত্যাগের হুমকি সিঙ্গুরের বিধায়কের

এ ক্ষেত্রেও ‘বিদ্রোহ’ দলীয় নেতৃত্বের কাছে কতটা গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে।

নিজের বাড়ির দুর্গাদালানে সিঙ্গুেরর বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজের বাড়ির দুর্গাদালানে সিঙ্গুেরর বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৪৫
Share: Save:

দলের সিঙ্গুর ব্লক কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর অনুগামী নেতাকে। সেই ক্ষোভে দলত্যাগের হুমকি দিলেন সিঙ্গুরের চার বারের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তুললেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি, একাধিক অভিযোগও।

রবিবার চুঁচুড়ায় দলের জেলা কমিটি এবং সিঙ্গুর-সহ ৩১টি ব্লক ও টাউন কমিটি ঘোষণা করেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের মার্চে তৃণমূলের সিঙ্গুর ব্লক কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ অনুগামী মহাদেব দাস। নতুন কমিটিতে মহাদেবের বাদ পড়া মানতে পারেননি বিধায়ক। তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে রবীন্দ্রনাথবাবুর হুমকি, ‘‘সিঙ্গুরে আমার সভাপতিকে দল যে ভাবে সরিয়ে দিল, তা কখনই মেনে নেব না। আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। দল সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে প্রয়োজনে অন্য দলেও যাওয়ার কথা চিন্তা করছি।’’

কোন দলে যাবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সিঙ্গুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘দলের এই ব্যবহার আমি আশা করিনি। দল আমার প্রতি প্রথম দিকে সম্মান দেখিয়েছিল। ইদানীং দলের ব্যবহারে আমি ব্যথিত। যাঁরা নানা দুর্নীতিতে যুক্ত, তাঁরাই এখন দল পরিচালানায় কাজে যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেন। আর আমরা যাঁরা কোনও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাঁদেরই দল কোণঠাসা করে দিচ্ছে।’’

কোন নেতাদের দিকে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন, তা-ও বলেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। তবে, তৃণমূলেরই একটি সূত্রে দাবি, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর আকচা-আকচি নতুন নয়। আগেও নানা ভাবে তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুরের টিকিট পাওয়া নিয়ে দুই নেতার ‘দ্বন্দ্ব’ চরমে ওঠে। দল রবীন্দ্রনাথবাবুকে টিকিট দিলেও সিঙ্গুরে তাঁর কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছিল। এ দিন সে প্রসঙ্গও তোলেন বিধায়ক। তাঁর খেদ, ‘‘এ অপমান মেনে নেওযা যায় না।’’

সিঙ্গুরের বিধায়ক ‘বিদ্রোহ’ করলেও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি সাপেক্ষেই সব হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবু শ্রদ্ধেয় মানুষ। দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি তিনি দলকেই জানতে পারতেন। তা না করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কমিটি তৈরির জন্য দলের জেলা সভাপতি প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনিও নাম দিয়েছিলেন। ওঁর দেওয়া নামটি সম্ভবত বাদ গিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা দলের কোনও নেতা একক ভাবে করেননি।’’ দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে সিঙ্গুরের বিধায়ক এবং মহাদেববাবুর সঙ্গেও কথা বলব। আশা করি, ওঁরা দলের অনুশাসন মানবেন।’’

তবে, রবীন্দ্রনাথবাবুর ‘বিদ্রোহ’ আগেও দেখা গিয়েছে। দলের একাংশের সঙ্গে বিরোধেরে জেরে তিনি ২০১২ সালেও ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বলে দলেরই একটি সূত্রের খবর। তবে, তখন রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছিলেন, ‘‘শারীরিক ও মানসিকভাবে আর পারছি না। তাই সক্রিয় রাজনীতি থেকে পাকাপাকি ভাবে অবসর নেব। আমি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ও যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও দলের সর্বোচ্চ নেত্রীকে চিঠি দিয়েছি।’’

শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাজনীতি থেকে অবসর নেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। এ ক্ষেত্রেও ‘বিদ্রোহ’ দলীয় নেতৃত্বের কাছে কতটা গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে। ব্লক সভাপতি পদ থেকে অপসৃত মহাদেব দাস বলেন, ‘‘আট মাসের জন্য কেন আমাকে ব্লক সভাপতি করা হল আর কেনই বা সরানো হল, কিছুই বুঝলাম না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Inner conflict Hooghly TMC Singoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy