বিক্ষোভ: অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুভাষ বিশ্বাস (ইনসেটে)-এর বাড়িতে বিক্ষোভ বিজেপির (বাঁ দিকে), অপরূপা পোদ্দার ও ফিরহাদ হাকিমের নামে পোস্টার তারকেশ্বরে (ডান দিকে)। ছবি: সুশান্ত সরকার ও দীপঙ্কর দে
বিক্ষোভ, ঘেরাও, স্মারকলিপি দেওয়া, রাস্তায় পোস্টার টাঙানো চলছিলই হুগলিতে। এ বার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে নিজের বাড়িতেই নিগৃহীত হলেন পান্ডুয়ার বৈঁচিগ্রামের এক তৃণমূল নেতা।
বুধবার বিকেলে কয়েকশো গ্রামবাসীকে নিয়ে বিজেপির জেলা মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা স্মরণিকা মণ্ডল বৈঁচিগ্রামে সুভাষ বিশ্বাস নামে ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এক ফাঁকে ভিতরে ঢুকে স্মরণিকাদেবীরা ওই নেতাকে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। টাকা ফেরত দেওয়ার মুচলেকাও লেখানো হয় সুভাষবাবুকে দিয়ে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
কেন্দ্রীয় প্রকল্প উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনায় আবেদনকারী এলাকার গরিব মহিলাদের আবেদনপত্র সংগ্রহ করে গ্যাস ডিলারের কাছে জমা দেওয়ার কাজ করেন সুভাষ। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, এক বছর ধরে সেই কাজ করার ফাঁকে সহজে গ্যাস পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৫০০-১০০০ টাকা করে নিয়েছেন সুভাষ। অথচ, বিনা খরচে ওই গ্যাস আবেদনকারীদের পাওয়ার কথা।
স্মরণিকাদেবীর অভিযোগ, ‘‘সুভাষবাবু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যে ভাবে টাকা তুলেছেন, তার বিরুদ্ধে আমি প্রশাসনের নানা মহলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম। লাভ হয়নি। তাই এ দিন সরাসরি এসে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি। পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। সুভাষবাবুও মুচলেকা দিয়েছেন, দু’মাসের মধ্যে গ্রাহকদের থেকে তোলা টাকা ফেরত দেবেন। দু’মাসের মধ্যে টাকা না দিলে আমরা ওঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’’ পান্ডুার বিডিও সাথী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ওই অভিযোগের কথা তিনি জানেন না।
অভিযোগ নিয়ে সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আমি উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগের কাজ করেছি। কেউ খুশি হয়ে ৫০, ১০০ টাকা মিষ্টি খেতে দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি আমার সঙ্গে যে আচরণ করল, তা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য। বাড়িতে এসে ওরা আমাকে মারধর করেছে। আমি আইনি পদক্ষেপ করার চিন্তাভাবনা করছি।’’ মারধরের অভিযোগ মানেননি স্মরনিকাদেবী।
প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে নালিশ ঠিকাদারের
আরামবাগ: প্রায় তিন বছর আগে বরাত ছিল ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ প্রকল্পে গ্রামে শৌচাগার নির্মাণের। তা সম্পূর্ণও হয়েছে। কিন্তু সেই সময় কাটমানি দিতে অস্বীকার করায় ঠিকাদার সংস্থার পাওনা লক্ষাধিক টাকা আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের গীতা ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েতে বোর্ড বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে প্রধানও। কিন্তু এতদিন বাদে, বুধবার ওই ঠিকাদার সংস্থার সম্পাদক মোহরচাঁদ আহমেদ গত বোর্ডের প্রধান গীতাদেবীর বিরুদ্ধেই লিখিত অভিযোগ জানালেন মহকুমাশাসক (আরামবাগ) এবং জেলাশাসকের কাছে। মহকুমাশাসক (আরামবাগ) লক্ষ্মীভব্য তান্নিরু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
অভিযোগ মানেননি গীতাদেবী। তাঁর দাবি, ‘‘নিম্নমানের কাজ করেছে ওই ঠিকাদার সংস্থা। আমি প্রধান থাকাকালীনই উপভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত থেকে তদন্ত করে তা প্রমাণও হয়। তা সত্ত্বেও টাকা আটকে না রেখে আমরা ওই কাজের নিরিখে চেক দিয়েছি। এখন কাটমানি হিড়িককে সামনে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে ওরা। জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্ত হলে ওদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে।”
মোহরচাঁদের অভিযোগ, “১৪৭টি শৌচাগার নির্মাণের বরাত পেয়েছিলাম আমরা। তৎকালীন প্রধান গীতাদেবী এক লক্ষ টাকা কমিশন চেয়েছিলেন। আমরা রাজি না-হওয়ায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৪২ টাকা আটকে রাখা হয়েছে। বারবার আবেদন করেও ওই টাকা পাইনি। বিডিও-কে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসকের কছে বিহিত চেয়েছি।”
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিকাদার সংস্থাটিকে ২০১৬ সালে গোড়ার দিকে বরাত দেওয়া হয়। শৌচাগার নির্মাণ শেষ হয় ওই বছরের শেষে। ঠিকাদার সংস্থার ১৬ লক্ষ ২ হাজার ৩০০ টাকার বিল জমা পড়ে। তারই মধ্যে শৌচাগার নির্মাণ নিয়ে উপভোক্তাদের অভিযোগ আসতে শুরু করে। যদিও এ নিয়ে পঞ্চায়েতের বর্তমান বোর্ডের পদাধিকারীরা কোনও কথা বলতেত চাননি।
অবশ্য পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের দাবি, ইঞ্জিনিয়াররা সেই সময়ে তদন্তে গিয়ে দেখেছিলেনন শৌচাগারপিছু যেখানে ৩৯০টি ইট দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে ৫০-৬০টি ইট কম। ১০ ইঞ্চি ভিতের জায়গায় ৫ ইঞ্চি ভিত। তারপরেও মাত্র ২০টি করে ইট কম ধরে ঠিকাদারের ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৫৮ টাকা পরিশোধ করা হয়। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ মানেননি মোহরচাঁদ। তাঁর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত মিথ্যা গল্প ফাঁদছে।”
অন্যদিকে, এ দিন কাটমানি ইস্যুতে খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতি, পুরশুড়ার কেলেপাড়া পঞ্চায়েত এবং আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতে তৃণমূল সদস্যদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
প্রধানের বিরুদ্ধে পোস্টার কানাইপুরে
উত্তরপাড়া: ‘কাটমানি খাওয়া’ নিয়ে এ বার পোস্টার পড়ল শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আচ্ছালাল যাদবের বিরুদ্ধে।
বুধবার কানাইপুরের বিভিন্ন এলাকায় ওই পোস্টার সাঁটা দেখা যায়। তা নিয়ে এলাকায় শোরগোল পড়ে। ‘কানাইপুর অঞ্চল নাগরিকবৃন্দ’-এর নামে ওই পোস্টারে অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি খেয়েছেন আচ্ছালাল। পুকুর ভরাট করে প্রোমোটিং, দুর্নীতি, সাংসদ ও মন্ত্রীদের নামে ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা, সরকারি ভেড়ি দখলের অভিযোগও রয়েছে। একই সঙ্গে আচ্ছালালের বিচারও দাবি করা হয়েছে পোস্টারে।
আচ্ছালালবাবু অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘নিজে খাব না, অন্যদেরও খেতে দেব না—আমি এই নীতিতে চলি। এতে হয়তো কিছু মানুষের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। তারাই চক্রান্ত করে বেনামে অভিযোগ আনছেন।’’
তিনি যোগ করেন, ‘‘পুকুর ভরাটের অভিযোগ পঞ্চায়েতে জমা পড়েছিল। দু’পক্ষকেই নোটিস দিয়ে ডাকা হয়। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তিনি কাগজপত্র নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু অভিযোগকারীরা আসেননি। পুলিশ, সিআইডি, সিবিআই যে কোনও সংস্থাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করানো হোক। দোষী প্রমাণিত হলে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নেব।’’
ফিরহাদ হাকিমের নামেও পোস্টার তারকেশ্বরে
তারকেশ্বর: তৃণমূলের পক্ষ থেকে বুধবার বিকেলে তারকেশ্বর শহরে জনসংযোগ যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। যাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগন্নোয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ দিনই শহরে নারদা-সারদা কাণ্ডের টাকা ফেরত চেয়ে এবং কাটমানি প্রসঙ্গ টেনে ফিরহাদ হাকিম ও অপরূপা পোদ্দারের নামে পোস্টার পড়ে। ঘটনার জেের কিছুটা অপ্রস্তুতে পড়েন স্থানীয় তৃণমূল নেত্ৃত্ব। ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বিষয়টিকে কুৎসা বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন,‘‘যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা অমিত শাহ-র ছেলে বা রাফেল কেলেঙ্কারি দেখতে পায় না। এটাই দুঃখের।’’ আর অপরূপা বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy