পরম্পরা: এই দরগাতেই হয় প্রার্থনা। মণ্ডপে লক্ষ্মী। — নিজস্ব চিত্র
পুজো হচ্ছে লক্ষ্মীর। কিন্তু মণ্ডপের খুঁটি পোঁতার আগে প্রার্থনা হয়েছে পিরের দরগায়। শনিবারও সেই দরগায় ধূপ-মোমবাতি জ্বেলে, বাতাসা দিয়ে পুজো ভাল ভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রার্থনা হল।
কোনও নতুন ছবি নয়। দীর্ঘদিন ধরে এটাই রীতি হাওড়ার জয়পুরের খালনার বাজারপাড়ার ‘আমরা সকল’-এর লক্ষ্মীপুজোর। পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। পুজোর এ বার ৩৮ বছর। উদ্যোক্তারা জানান, প্রথম থেকেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলিত ভাবে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করে আসছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, উভয় ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক এই শ্রদ্ধা ও মিলনের ঐতিহ্য চলে আসছে বছরের পর বছর। কোনও কিছুই তাতে ফাটল ধরাতে পারেনি। পুজো কমিটির সদস্য সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে বছরভর যে সম্প্রীতি বজায় থাকে, তা বিশেষ করে ফুটিয়ে তুলি এই পুজোর সময়ে। সে জন্য দুই সম্প্রদায়ের মানুষই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজো সফল করতে পরিশ্রম করি।’’ সুভাষকে সমর্থন করেন পুজো কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক শেখ মান্নাফ।
এমনিতেই লক্ষ্মীপুজোর জন্য খালনা বিখ্যাত। এখানে যেমন পুরনো পারিবারিক পুজো রয়েছে, তেমনই রয়েছে জাঁকজমকের বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো। তাতে থিমের ছড়াছড়ি। আলোকসজ্জা এবং মণ্ডপের বৈচিত্র্য জেলার অনেক বড় দুর্গাপুজোকেও হার মানায়। লক্ষাধিক দর্শনার্থী আসেন পুজো দেখতে। বাগনান থেকে খালনা পর্যন্ত সারারাত গাড়ি চলে। নিরাপত্তার জন্য গ্রামীণ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুজোর রাতে প্রত্যন্ত এই গ্রাম ভেসে ওঠে আলোকমালায়। মানুষের ভিড়ে থইথই করে করে রাস্তা। তারই মাঝে খালনাকে অন্য মাত্রা দেয় বাজারপাড়ার ‘আমরা সকল’-এর সম্প্রীতির পুজো। এই পুজো কমিটির এ বারের থিম ‘বল্লাল সেনের ঢিপি’। পুজোকে কেন্দ্র করে মাঠে মেলা বসেছে। হাজার হাজার দর্শনার্থী পুজো দেখতে আসছেন। মেলায় ঘুরে জিনসপত্র কিনছেন তাঁরা। খাচ্ছেন জিলিপি, পাঁপড় আর ফুচকা। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।
লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে খালনায় প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড় হয়। বাজারপাড়াও তার ব্যতিক্রম না। এখানে মুসলিম বাড়িগুলিতেও আত্মীয়েরা চলে আসেন। শেখ মান্নাফের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামের নিজস্ব পুজো এটি। আমরা আনন্দ করব আর আমাদের আত্মীয়েরা বাইরে থাকবেন, হয় নাকি? এটাই তো আমাদের ঐতিহ্য।’’
যেখানে পুজো হচ্ছে, তার পাশেই রয়েছে জুনেদ আলি শাহ পিরের দরগা। পুজো শুরুর আগে সেখানেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলিত ভাবে প্রার্থনা করেছেন। প্রতি বছর ১০ বৈশাখ দরগায় পিরের স্মরণসভা হয়। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয় প্রার্থনা ও মেলা। তাতে হিন্দুরাও শামিল হন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় দরগায় প্রার্থনা হয়। পুজোর দিনগুলিতে তখন মণ্ডপের মাইক বন্ধ রাখা হয় বলে জানান পুজো কমিটির সম্পাদক শৈলেন হাজরা।
সম্প্রীতির এক অন্য নজিরের নাম বাজারপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy