গ্রাস: গঙ্গার ভাঙনে এ ভাবেই তলিয়ে যাচ্ছে পাড়। ছবি: দীপঙ্কর দে
গঙ্গার পাড় ঘেঁষে মাথা তুলছে একের পরে এক বহুতল। অভিযোগ, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নিয়মবিধির কোনও তোয়াক্কা করেনি। সঙ্গে নজরদারিতে প্রশাসনিক খামতিতো রয়েছেই। এই দুইয়ের অভিঘাতে ক্রমশ তীব্র হয়েছে ভাঙন সমস্যা। হুগলির উত্তরপাড়ায় শিবতলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে ক্রমশ। শ্মাশানঘাটের একাংশ ইতিমধ্যেই গিলে ফেলেছে নদী। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ভাঙনের কথা জানিয়েও তেমন কোনও ফল হয়নি।
গত এক-দেড় দশকে হুগলি শিল্পাঞ্চলে গঙ্গার পাড় ঘেঁষে তৈরি হয়েছে অনেক বহুতল। অভিযোগ, বেশ কিছু বহুতল নির্মাণ হয়েছে নিয়ম না মেনেই। পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীর পাড়ে বেআইনি ভাবে বাড়ি নির্মাণ হলে ভাঙন আরও তীব্র হয়। যেমনটা হয়েছে উত্তরপাড়া এবং চন্দননগরে গঙ্গাপাড়ের একাংশে। সঙ্গে গঙ্গাবক্ষ থেকে লাগামহীন ভাবে বালি তোলা তোলায় গত কয়েক বছরে সমস্যা আরও বেড়েছে। করোনা-আবহে এখন বালি তোলার কাজ বন্ধ রয়েছে ঠিকই, তবে বেআইনি ভাবে নির্মাণকাজ এখনও কিছু জায়গায় চলছে বলে অভিযোগ উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের।
গত কয়েক বছরে গঙ্গার পশ্চিমপাড় ঘেঁষে জিটি রোড সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় বড় শপিং মল এবং আবাসন গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, সেগুলির বেশিরভাগই মাথা তুলেছে বন্ধ ইটভাটার জমিতে। নিয়ম বলে, যেখানে জোয়ার-ভাটা খেলে, সেখান থেকে ৪৭ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণকাজ করা যায় না। কিন্তু অভিযোগ, এই নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই।
কলকাতা হাইকোর্ট ২০০৬ সালে গঙ্গা লাগোয়া পুর-এলাকায় বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে। কমিটিতে রাজ্য দূষণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা রিপোর্ট দেন আদালতকে। এরপর গঙ্গার পাড়ে সমস্ত নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বেআইনি ভাবে নির্মাণ যাতে না-হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয় প্রশাসনকে। অভিযোগ, নির্দেশ কার্যকর করতে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করেনি। আদালত নিযুক্ত কমিটির সদস্য পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উত্তরপাড়া বা চন্দননগরের যে সব এলাকায় গঙ্গার পাড়ে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, তার পাশেই ভাঙন দেখা দিচ্ছে। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘পাড় ভেঙে নিজের দখল হওয়া জায়গায়ই ফিরিয়ে নিচ্ছে গঙ্গা।’’
দিন কয়েক আগে জলের তোড়ে কোতরং এলাকায় একটি গঙ্গার ঘাট ভেঙে যায়। চোরাস্রোতের জেরে শিবতলা শ্মশানঘাটও বিপজ্জনক ভাবে ভাঙছে। আবার কোতরংয়ে গঙ্গার ধারের একটি বড় আবাসন লাগোয়া পাড়েও ভাঙন ধরেছে। হুগলি জেলা সিটিজেনস্ ফোরামের তরফে শিবতলা শ্মশানঘাট ও নদীর পাড় সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি মহকুমাশাসকের (শ্রীরামপুর) কাছে স্মারকলিপি দেন সংগঠনের সভাপতি শৈলেন পর্বত। ওই আবাসনেরও পরিচালন কমিটির পক্ষ থেকেও সেচ দফতরকে ভাঙন সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পরিচালন কমিটির কর্তা বিজন দাস বলেন, ‘‘উত্তরপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই গঙ্গার পাড় ভাঙছে। সেচ দফতরের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত। আমরা চিঠি দিয়েছি।’’
কী বলছে প্রশাসন?
নাম প্রকাশ না-করার শর্তে জেলা প্রশাসনের পদস্থ বলেন, ‘‘একই ধরনের সমস্যা চন্দননগরে গঙ্গার পাড়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। সেখানে পরিদর্শনের পরে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। উত্তরপাড়ার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতির গুরুত্ব অনু্যায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ উত্তরপাড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া ‘‘ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতর যাতে জরুরি ভিত্তিতে সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়, সেই আবেদন জানিয়ে আমরাও চিঠি দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy