কমপক্ষে ৫০ জন কনস্টেবল প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও আছেন ১৫ জন, কোথাও ১৮ জন, আবার কোথাও ২৫ জন। ঢাল তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার হয়েই দিন কাটাচ্ছে হাওড়া গ্রামীণ জেলার ১১টি থানা। ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যেমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুলিশ কর্মীদের অনেকেই বলছেন, লোকবল কম হওয়ায় দুষ্কৃতীদের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে তাঁদের। এরই মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজ্য সরকার চায় না ভোটের কেন্দ্রীয় বাহিনী আসুক এ রাজ্যে। ভোট করতে ভিন্ জেলা থেকে পুলিশ আসবে। কিন্তু বোট পরবর্তী হিংসা সামাল দিতে হিমসিম খেতে হবে জেলা পুলিশকে— তা নিয়েই চিন্তায় প্রশাসন।
বিশেষত হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্মী সঙ্কট নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। গত কয়েকমাসে শ্যামপুর, আমতা, জয়পুর প্রভৃতি এলাকায় অপরাধীদের ধরতে গিয়ে বার বার মার খেয়েছে পুলিশ। গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা মনে করছেন লোকবলের অভাবেই এত সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
২০১১ সালে তৈরি হয় হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ জেলা। ১১টি থানা, চারটি তদন্তকেন্দ্র এবং দু’টি ফাঁড়ি নিয়ে তার বিস্তার। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, পৃথক পুলিশ জেলা তৈরি হওয়ার পরও নতুন করে কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়নি। জেলা পুলিশ কর্তারা জানান, ২০১১ সালে যতজন কনস্টেবল ছিলেন তাঁদের নিয়েই চলছে থানাগুলি। গত সাত বছরে বহু কনস্টেবল অবসর নিয়েছেন। শূন্যপদে নতুন নিয়োগ হয়নি।
এমন সমস্যা হাওড়া কমিশনারেটে নেই বলে জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন। এই বৈষম্য গ্রামীণ জেলা পুলিশ এলাকায় সমস্যাও তৈরি করছে। বিশেষ করে ডোমজুড়ে। পুলিশ কর্তাদের একাংশের ক্ষোভ, ডোমজুড় হাওড়া কমিশনারেট এলাকা সংলগ্ন এলাকা। অথচ, তা গ্রামীণ জেলা পুলিশের আওতায়। দেখা যায়, কমিশনারেটের পুলিশ অপরাধীদের খুঁজতে তল্লাশি চালালে তারা চলে আসে সলপ, অঙ্কুরহাটি এলাকায়। পুলিশের কর্মী সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে ওই সব এলাকায় ক্রমশ বাড়ছে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, ডোমজুড় থানায় কনস্টেবলের সংখ্যা মাত্র ২৫। অথচ, এটি একটি শিল্পোন্নত এলাকা। রমরমিয়ে চলছে প্রমোটারি ব্যবসা। অভিযোগ, সেই সুযোগে জাঁকিয়ে বসেছে তোলাবাজি। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার ক্ষোভ, ‘‘অন্তত ৫০ জন কনস্টেবল প্রয়োজন এখানে। অর্ধেক নিয়ে কাজ চালাতে হয়। তা-ও এই ২৫ জনের মধ্যে আবার অন্তত পাঁচ জন বয়স্ক। সামনেই তাঁদের অবসর। ফলে পরিস্থিতি শোচনীয়।’’
দেড় বছর আগে ধুলাগড়িতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছিল। সে বার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দিকেই আঙুল তুলেছিলেন অনেকে। ধুলাগড়ি সাঁকরাইল থানার অধীন। সেখানে কনস্টেবল রয়েছেন জনা পনেরো। কয়েকমাস আগে সাঁকরাইলে হাজি এসটি মল্লিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। কনস্টেবল না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে।
বেশির ভাগ থানাতেই কাজ চলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভরসায়। তাতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। গ্রামীণ জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের মতে, সিভিক ভলান্টিয়াররা প্রশিক্ষিত নন। তাদের হাতে বন্দুক থাকে না। তা ছাড়া সিভিকরা স্থানীয় যুবক হওয়ায় অনেক সময়ই গোপন অভিযানের ফাঁস হয়ে যায়। তাতে অভিযানের ব্যর্থতা বাড়ে।
কনস্টেবলের মতো ফাঁকা পড়ে রয়েছে বহু অ্যাসিসট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের (এএসআই)–এর পদ। কাজের চাপ বাড়ছে ইনস্পেক্টর ও সাব ইনস্পেক্টরদের। এমনকী অনেক সময়ই তাঁরা ছুটিও পান না দিনের পর দিন। ফলে কমে যায় কর্মদক্ষতা।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা। তাঁর আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই কনস্টেবল এবং এএসআই পদে নিয়োগ হবে বলে জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy