নতুন সেতুর নকশা।ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হাওড়ার ঐতিহাসিক বাকল্যান্ড সেতুর বয়স এখন ৮৬ বছর। সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রেল জানিয়েছে, সেটির ‘সুস্থ’ থাকার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্রিটিশ আমলের এই সেতু ভেঙে ফেলা হবে। আর তার পাশেই তৈরি করা হবে বিদ্যাসাগর সেতুর মতো আধুনিক কেব্ল স্টেড ব্রিজ। তবে নতুন ব্রিজ তৈরির পরেই ওই সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে। একই ভাবে বয়সের ভারে জরাগ্রস্ত টিকিয়াপাড়ার কাছে বামনগাছি সেতুও ভেঙে ফেলে নতুন সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল। ইতিমধ্যে দু’টি সেতু তৈরির প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
হাওড়া স্টেশনের অনতিদূরে রেললাইনের উপরে ১৯৩৩ সালে তৈরি হয়েছিল এই বাকল্যান্ড সেতু। সেতুটি তৈরি করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে। সরকারি ভাবে এই সেতুটির নাম ‘বাকল্যান্ড ব্রিজ’ হলেও কালক্রমে সেতুটি বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। যেমন সেতুর নীচ থেকে মার্টিন রেল ছাড়ত বলে অনেকের কাছে সেটি মার্টিন সেতু বলে পরিচিত ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া রেল কোম্পানি পাল্টে পূর্ব রেল হওয়ার পরে এটির নাম হয়ে যায় চাঁদমারি সেতু। রেলের লোকজন এখনও সেটিকে চাঁদমারি সেতুই বলে থাকেন। পরবর্তীকালে সেতুটি স্থানীয় ভাবে বাঙালবাবু ব্রিজ বলে পরিচিত হয়ে ওঠে। হাওড়া শহরাঞ্চলের লোকজন এখনও এই নামেই ডেকে থাকেন।
কিন্তু এই ঐতিহাসিত সেতু ভেঙে না ফেলে আমূল সংস্কার কি করা যেত না? এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান বলেন, ‘‘সেতুটির বয়স হয়ে গিয়েছে। সুস্থ থাকার সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে। তাই ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যত দিন না নতুন সেতু তৈরি হয়, তত দিন ওই সেতু দিয়েই গাড়ি চলাচল করবে।’’
নতুন সেতুর নকশা।ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রেলকর্তাদের মতে, ওই রেল ওভারব্রিজ (আরওবি) দিয়ে আগে যেখানে হাল্কা গাড়ি-ঘোড়া চলত, সেখানে এখন ভারী ট্রাক-লরি চলে। সেতুটি এত গাড়ির ভার নিয়ে যথেষ্ট ক্লান্ত। তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ ওই সেতুর নীচ দিয়েই গিয়েছে পূর্ব রেলের মেন লাইন-সহ বাকি সব গুরুত্বপূর্ণ লাইন। হাওড়ার ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন) অবিনাশ জৈন বলেন, ‘‘নতুন সেতুটি তৈরির আগে প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন সেতু জায়গার জন্য রেলের কয়েকটি চারতলা কোয়ার্টার্স ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। জবরদখলকারীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রেলের জায়গায় পড়ে থাকা আবর্জনা সরানো হচ্ছে।’’
কিন্তু কেমন হবে নতুন সেতু?
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন সেতুটি তৈরি হবে চার লেনের। সেতুটি হবে বিদ্যাসাগর সেতুর মতো কেব্ল স্টেড। একটি ৫০ মিটার পাইলনের সঙ্গে ইস্পাতের কেব্ল দিয়ে টানা থাকবে। কেবলগুলি এক দিক থেকে সেতুর ১৩৪ মিটার প্রধান অংশটি টেনে রাখবে আর অন্য দিকে ৬৬ মিটারের বাকি অংশটি পাইলনের আর একটি অংশের কেব্ল দিয়ে টানা থাকবে। দু’টি লেন হবে সাড়ে সাত মিটার করে। এ ছাড়াও থাকবে চওড়া ফুটপাত। নতুন সেতুটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি টাকা। যে কোম্পানি মাঝেরহাট সেতু তৈরি করছে, এই সেতুটি তৈরির বরাতও পেয়েছে হরিয়ানার সেই সংস্থা এসপি সিংগলা।
এ ছাড়া, টিকিয়াপাড়ার কাছে বামনগাছি সেতু ভেঙে ফেলে যে নতুন সেতু তৈরি হবে, তার জন্য ৪৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। রেলের যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সেতুর নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, সেই এ কে সিংহ বলেন, ‘‘নতুন সেতু তৈরি হওয়ার পরে চাঁদমারি সেতু ধীরে ধীরে কেটে অন্য জায়গায় নিয়ে আসা হবে। তার পরে সেটি ভাঙা হবে। এ জন্য ট্রেন বন্ধ রাখা হবে না। অর্থাৎ, ‘ব্লক’ নেওয়া হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy